কলকাতায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানের ভিতরেই ৪ ঘণ্টা আটকে ছিলেন যাত্রীরা। এতে বেশ কয়েকজন যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক গিয়ে তাঁদের সেবা দেন। একটি অ্যাম্বুলেন্সও ছিল প্রস্তুত। চরম ভোগান্তি শেষে ৪ ঘণ্টা বিলম্বে ত্রুটিমুক্ত না করেই বিমানের ফ্লাইটটি নিরাপদে ঢাকায় ফিরে আসে। যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তির জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন। বিমানের মতে, কলকাতায় ওই ফ্লাইট যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর সময় যদি যাত্রীদের অফলোড করে এয়ারপোর্টে এনে রাখার সুযোগ দিত তাহলে তাঁদের এত দুর্দশা ও ভোগান্তি দেখা দিত না। ঢাকায় আসার পর বিমানের নিজস্ব হ্যাঙ্গারে গিয়ারের সামান্য ত্রুটি সেরে সেটা আবার গতকাল বিকালেই চট্টগ্রাম গেছে। এ বিষয়ে বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক খন্দকার তাহেরা জানিয়েছেন, আসলে এখানে বিমানের কিছুই করার ছিল না। যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল অনাকাক্সিক্ষত ও আকস্মিক। এ ধরনের ত্রুটি যে কোনো সময় দেখা দিতে পারে। মূলত ল্যান্ডিং গিয়ারের সামান্য ত্রুটির জন্য ককপিটে রেড সিগন্যাল আসায় পাইলট তা মেরামতে দুই দফা সময় নেওয়ায় ঘণ্টা চারেক অতিরিক্ত লেগেছে। এ সময়টুকু যাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে। বিমান জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে কলকাতা থেকে বিমানের ফ্লাইটটির ঢাকার উদ্দেশে রওনার কথা ছিল। তবে ফ্লাইট ছাড়ার আগমুহূর্তে কারিগরি ত্রুটির কথা জানানো হয় এবং বিলম্বে ছাড়বে বলা হয়। ঘণ্টাখানেক পর প্রথম দফা যান্ত্রিক ত্রুটি সেরে ফ্লাইটটি আবারও ঢাকার উদ্দেশে রওনার প্রস্তুতি নেয়। তবে রানওয়েতে গিয়ে ফ্লাইটটি আবারও কারিগরি ত্রুটির কথা বলে উড্ডয়ন বাতিল করে বোর্ডিংয়ের কাছে ফিরে আসে। ফ্লাইটটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিলেন। প্রচণ্ড গরমে তাঁদের একজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বিমান জানিয়েছে, সাধারণত এ ধরনের ত্রুটি মেরামত করার সময় ফ্লাইটের পাওয়ার অফ করে দিতে হয়। এ কারণে উড়োজাহাজের ভিতরে থাকা যাত্রীরা এসির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় প্রচণ্ড গরমের শিকার হন। যদিও বিমানের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের বাইরে বেরোনোর অনুমতি দেননি। ফলে যাত্রীদের বাধ্য হয়েই ফ্লাইটের ভিতরে বসে থাকতে হয়। এ সময় কী ধরনের ভোগান্তি হতে হয়েছে সে সম্পর্কে কজন যাত্রী জানান, অনেকের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তার পরও তাঁদের নামতে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে যাত্রী শওকত হোসেন জানান, গ্রাউন্ড ইলেকট্রিসিটি না থাকায় এসি চলেনি, তাঁদের নামতে দেওয়া হয়নি।
কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ফ্লাইটটি কারিগরি ত্রুটির কারণে ঠিক সময়ে ছাড়তে পারেনি। একজন অসুস্থ হন বলে আমরা জানতে পারি। সংবাদ পেয়ে প্লেনের সামনে চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক ঢুকে ওই রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। শেষ পর্যন্ত সোমবার মধ্যরাত ১টা ৪১ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি।
এদিকে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা ফ্লাইটে আটকে থাকা যাত্রীরা ফেসবুকে তাঁদের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। উল্কা হোসেন নামে এক যাত্রী তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘কলকাতা থেকে দেশে আসার উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে ওঠার ৫ মিনিটের মাথায় ক্যাপ্টেন বললেন যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বিলম্ব হবে! ওই অবস্থায় এসি কাজ করছিল না। লাইট অফ হয়ে যাচ্ছিল বারবার। গরমে আধমরা অবস্থা আমাদের সবার। এভাবে আমরা ৪ ঘণ্টা আটকে ছিলাম। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার তিনবার এসে ঠিকঠাক করে দেওয়ার পর ক্যাপ্টেন অতি দক্ষতার সঙ্গে বিমানের ১৮০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা অবতরণ করলেন।’
যান্ত্রিক ত্রুটি বলতে বিমানের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটিতে কী হয়েছিল তা জানতে চাইলে গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের আগমুহূর্তে পেছনে ল্যান্ডিং গিয়ারে ইন্ডিকেটরে ত্রুটি দেখা দেয়। তখন উড়োজাহাজটি রানওয়ের কাছে রেখে ত্রুটি খুঁজতে থাকেন কলকাতা বিমানবন্দরের প্রকৌশলীরা। এ কাজের জন্য বিমানের এসিসহ অন্যান্য ইঞ্জিন বন্ধ রাখা হয়। প্রায় ১ ঘণ্টা পর ত্রুটি কাটিয়ে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নেয় উড়োজাহাজটি। সে মুহূর্তে আবার একই ত্রুটি ধরা পড়ে এয়ারলাইনসটির। কিন্তু এ ত্রুটি ঠিক করতে কত সময় লাগবে তা বলতে পারেননি প্রকৌশলীরা। এতে গরমে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কোনো উড়োজাহাজ বিমানববন্দর থেকে বের হলে রানওয়ে যাত্রী নামানো বা ওঠানোর সুযোগ নেই। আইনে এমনটাই বলা আছে। এটাই নিয়ম। আর প্রকৌশলীরাও ঠিকমতো বলতে পারছিলেন না ত্রুটি সারতে ঠিক কত সময় লাগবে।’
এ সম্পর্কে বিমানের প্রকৌশল শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, কলকাতায় বিমানের প্রকৌশল সহযোগিতা দিয়ে থাকেন এয়ার ইন্ডিয়ার স্টাফরা। এখানেও তাঁরা এসেছিলেন। কিন্তু তাঁরা বিষয়টি ধরতে পারেননি। যে কারণে ওই ত্রুটি রেখেই ঢাকায় নিয়ে আসা হয় ফ্লাইটটি। কারণ এটা তেমন কোনো বড় ত্রুটি ছিল না। ল্যান্ডিং গিয়ারে একটি কেবল ইন্টারমিট হওয়ায় ককপিটে রেড সিগন্যাল যাচ্ছিল। ঢাকায় আসার পর মাত্র আধা ঘণ্টায় সে ত্রুটি সেরে গতকাল বিকালেই সেটা চট্টগ্রাম চলে গেছে যাত্রী নিয়ে।