শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

আন্দোলন দমাতেই হামলা মামলা : স্বপন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আন্দোলন দমাতেই হামলা মামলা : স্বপন

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, আন্দোলন দমাতেই বিএনপির ওপর মামলা-হামলা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার। তিনি বলেন, দেশব্যাপী বিএনপি কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিতে মানুষ ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে। ভোলায় বিএনপি কর্মী হত্যার প্রতিবাদে ঢাকার মহাসমাবেশে ২ লাখ মানুষের সমাগম প্রমাণ করে সরকারের পদত্যাগ ও দল নিরপেক্ষ সরকার গঠন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ অবস্থা বুঝতে পেরেই সরকার বিএনপির আন্দোলন দমাতে চায়। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করবে বিএনপি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জহির উদ্দিন স্বপন। নিজ নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-১ প্রসঙ্গে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, আসনটি দেশের অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে অনেক বেশি আলোচিত। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের এমন কোনো নেতা-কর্মী নেই যাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়নি। মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ নেতা-কর্মী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এলাকাছাড়া। তিনি বলেন, আমাকে ঘোষণা দিয়ে এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে যেতে দেওয়া হয় না। এলাকায় ঈদের নামাজ পড়তে দেওয়া হয় না। ধর্মীয়-সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে যেতে দেওয়া হয় না। এ অন্যায় চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। প্রশাসনের বড় অংশ নিরপেক্ষ থাকতে চাইলেও পারছে না। ক্ষমতাসীন দলের একটি বিরাট অংশ এই অন্যায়কে পছন্দ না করলেও গুটিকয়েক লুটেরা, হিংস্র নেতার কাছে তারা জিম্মি। তিনি বলেন, এলাকায় সরকারি দলের প্রবীণ নেতা, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন কি না জানি না। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারই ইমেজ। সামগ্রিকভাবে দেশের একটি সুস্থ পরিবর্তন ছাড়া আপাতত এর কোনো সমাধান দেখছি না। সাবেক এই ছাত্রনেতা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, দেশ খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মানবাধিকার যে কোনো মানদণ্ডে দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জ্বালানি তেলের মূল্য প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানোয় জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। ব্যাংকগুলোতে তারল্যের সংকট ব্রেক করেছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ রেকর্ড ব্রেক করেছে। শেয়ারবাজারের সূচক তলানিতে নেমেছে। আস্থার সংকটে ব্যাংকে আমানত রাখা বন্ধ করে দিচ্ছে মানুষ। সুইস গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে। এই চিত্র সরকার স্বীকার করে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ফলে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ মাত্রায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আগামী ২০২৪ সাল থেকে ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হবে। এই ভঙ্গুর অর্থনীতির পক্ষে তা কোনোভাবেই সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে ঋণদাতাদের কাছে বাংলাদেশ একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আইএমএফের কাছে ইতোমধ্যে ঋণের জন্য সরকার ধরনা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের কাছে তহবিল পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। অর্থনীতির এই করুণ চেহারা সরকার স্বীকার করলেও অর্বাচীন মন্ত্রীরা দেশবাসীকে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার গান শুনিয়েছিলেন উন্মাদের মতো। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ দাতাদের সঙ্গে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছিল। এই গভীর সংকটের জন্য দায়ী অপরিণামদর্শী এই উদ্ধত্যপূর্ণ সরকার।  তিনি বলেন, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সর্বশেষ চিত্র প্রসঙ্গে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল চেয়ারম্যানের সফরের সময় ঢাকাতেই জানিয়েছেন, শত শত গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনের অভিযোগ জাতিসংঘ আমলে নিয়েছে। এ নিয়ে সরকারি ব্যাখ্যাকে মিথ্যা বলে আখ্যা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ, কয়েকটি বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিশ্বের প্রায় সব মানবাধিকার সংগঠন একযোগে আমাদের সরকার ও রাষ্ট্রকে অমানবিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সরকার গোটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে বহুভাবে বিভাজিত করে পরস্পরের মধ্যে সংঘাত লাগিয়ে দিয়েছে। মানুষের সর্বশেষ ভরসার আশ্রয়স্থল গণমাধ্যমকেও সেলফ সেন্সরশিপে বাধ্য করেছে। রাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে আজ একটি ফ্যাসিবাদী চেহারা ধারণ করেছে। নিজের দল বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহ্বানে দেশের প্রায় সব গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি মতবিনিময় করেছে। সব দলই একমত হয়েছে, এই সরকারের অধীনে কেউ অংশ নেবে না। কেবলমাত্র দলনিরপেক্ষ সরকার গঠন করার মধ্য দিয়েই একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হতে পারে। সেই নির্বাচনে জয়ী-বিজিত সব শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে। এই সরকার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ ভেঙে পড়া এই রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামত করার দায়িত্ব পালন করবে। সেই কর্মসূচি নিয়েও দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় চলছে।

 

 

সর্বশেষ খবর