তেলবাহী ট্রেনের চালক মনোয়ার হোসেন সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে কুমিল্লার ময়নামতি স্টেশনে পৌঁছালে হঠাৎ একটি পাথর এসে লাগে তাঁর গায়ে। তিনি আহত হন। এ বছরের ৬ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। সাধারণ যাত্রীর পাশাপাশি রেল কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মী, পুলিশ কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এ থেকে। প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। ট্রেনেরও ক্ষতি হয়। চট্টগ্রামে ভাটিয়ারীতে ২০১৩ সালে চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তের ছোড়া পাথরের আঘাতে নিহত হন প্রকৌশলী প্রীতি দাশ (২৪)। নীলফামারীর সৈয়দপুরে গত বছরের ১৫ আগস্ট পাথরের আঘাতে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আজমির ইসলামের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ৮২টি। এতে আহত হন ২১ জন। এর মধ্যে রেলের কর্মচারী পাঁচজন। অন্যরা যাত্রী। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ৭৪টি। এতে ১৯ যাত্রী ও রেল কর্মচারী আহত হন। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায় জড়িতরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিকৃত আনন্দ পেতে এসব ঘটায় তারা। এতে ট্রেনেরও ক্ষতি হয়। বিশেষ করে লুকিং গ্লাস ও জানালা ভেঙে যায়। বাংলাদেশ রেলওয়ে ইতোমধ্যে পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করেছে। ‘ট্রেনে পাথর ছোড়া হতে বিরত থাকুন, ভ্রমণরত স্বজনদের নিরাপদ রাখুন’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার ১৫ এলাকা পাথর নিক্ষেপপ্রবণ। এগুলো হলো- পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের কিসমত-রুহিয়া; পাবনার ভাঙ্গুরা রেলস্টেশন, মুলাডুলি রেলস্টেশন, বড়াল ব্রিজ রেলস্টেশন; বগুড়ার ভেলুরপাড়া রেলস্টেশন, গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর রেলস্টেশন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলস্টেশন, শহীদ এম মনসুর আলী রেলস্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলস্টেশন, সলপ রেলস্টেশন, জামতৈল রেলস্টেশন; নাটোরের আবদুলপুর রেলস্টেশন, চুয়াডাঙ্গার চুয়াডাঙ্গা আউটার ও খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন এলাকা। রেলওয়ের ডেপুটি অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পশ্চিম) হাসিনা খাতুন জানান, প্রতিনিয়ত পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকা শনাক্ত করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, মসজিদের ইমাম ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাথর নিক্ষেপ রোধে জনসচেতনতা তৈরিতে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি পাথর নিক্ষেপবিরোধী স্লোগানসংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে পরিবার, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে এগিয়ে আসবে হবে।