রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সেই গলা কাটা পাসপোর্টে এখন জটিলতা

♦ সাড়ে চার মাসে ঢাকার ছয় জেলায় জটিল সংশোধনের আবেদন ৩৯ হাজার ৩৫৩টি ♦ আবারও আঙুলের ছাপ নেবে ইসি

গোলাম রাব্বানী

গলা কাটা পাসপোর্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের ক্ষেত্রে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গলা কাটা পাসপোর্টের তথ্যানুযায়ী এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিয়ে বিপাকে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া জাল সনদ, জাল পাসপোর্ট, জাল জন্মনিবন্ধন এবং কারিগরি, মাদরাসা বোর্ড, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের বয়স পাঁচ থেকে ১২ বছর কমানো, সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তনসহ প্রায় এক ডজন বিষয়ের সংশোধন নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত সাড়ে চার মাসে ইসির কাছে ঢাকা বিভাগের ছয় জেলায় এমন জটিল সংশোধনের আবেদন পড়েছে ৩৯ হাজার ৩৫৩টি। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের ২ হাজার ৪৪০, মুন্সীগঞ্জের ৩ হাজার ৩১৬, নারায়ণগঞ্জের ৪ হাজার ৯৭৪, নরসিংদীর ৩ হাজার ৩৩৩, ঢাকার ১৯ হাজার ৭৩৩ ও গাজীপুরের ৫ হাজার ৫৫৭টি আবেদন রয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে এ ছয় জেলায় এনআইডি সংশোধনের মোট আবেদন পড়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার ৯৮৭টি। এ ধরেনর জটিল সংশোধনের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গলা কাটা পাসপোর্ট, জাল সনদ, জাল সার্টিফিকেট, জাল জন্মনিবন্ধন ও জাল পাসপোর্টের তথ্যানুযায়ী অনেক নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদেন করছেন। এসব বিষয় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। যাচাই-বাছাইয়ে যখন আমরা জাল কাগজপত্র পাচ্ছি তখন আবেদন বাতিল করে দিচ্ছি।’ ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, গলা কাটা পাসপোর্টের তথ্যানুযায়ী অনেক প্রবাসী জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করছেন। কিন্তু তাদের বাবা-মায়ের নামসহ অনেক তথ্যই বাস্তবে মিলছে না। আবার অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্রে দুজন স্বামীর নাম রাখারও আবেদন করছেন। আবার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়স সংশোধনের আবেদন করছেন। কিন্তু এসব জটিল আবেদনের বিষয়ে ইসি কর্মকর্তারা তদন্ত করতে গিয়ে কাগজপত্র জাল পাচ্ছেন, তাই আবেদনগুলো বাতিল করা হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে যাদের চার আঙুলের ছাপ দেওয়া আছে, তাদের আবারও আঙুলের ছাপ দিতে হবে। এ কার্যক্রম আগামী বছর হাতে নেবে ইসি। তবে যারা স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করার সময় ১০ আঙুলের ছাপ দিয়েছেন, তাদের আর দিতে হবে না। এদিকে এনআইডি সংশোধনের গতি বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তিনি বলেছেন, লজিস্টিকের অভাব থাকতে পারে তার পরও জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবার গতি আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ঢাকা অঞ্চলের সকল পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। খারাপ কাজ করলে তিরস্কার এবং ভালো কাজ করলে পুরস্কার দেওয়া হবে উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন ভোটার তৈরি এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কেউ যেন ভোটার না হতে পারে সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। ফলে যারা ১০ আঙুলের ছাপ দেয়নি, জানুয়ারি থেকে তাদের ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। সভায় ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদন, নিষ্পত্তি ও অনিষ্পত্তি সংক্রান্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী এ ছয় জেলার তথ্যাদি তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ১ মে থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ছয় জেলায় তিন ক্যাটাগরিতে এনআইডি সংশোধনের আবেদন জমা পড়ে ৪ লাখ ৮ হাজার ৯৮৭টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তির সংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৪। এ ছাড়া নতুন ভোটার আবেদন এবং এনআইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং ইভিএম নিয়ে কথা বলেন ঢাকা অঞ্চলের কর্মকর্তারা। সভায় জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা এবং সার্বিক কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরপ চারজন কর্মকর্তাকে সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন- ঢাকার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মুনীর হোসাইন খান, উপজেলা নির্বাচন অফিসার আফরোজা, মো. আবদুল আজিজ ও থানা নির্বাচন অফিসার আল-আমিন।

 

সর্বশেষ খবর