সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রশ্ন অনেক উত্তর কম

অপহরণ করা হয়েছিল দাবি রহিমার, খতিয়ে দেখছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

প্রশ্ন অনেক উত্তর কম

ফরিদপুরে কুদ্দুস মোল্লার এ বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয় আলোচিত রহিমা খাতুনকে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

২৯ দিন নিখোঁজ থাকার পর খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি দাবি করেন, ২৭ আগস্ট রাতে মহেশ্বরপাশার বাড়ির নিচ থেকে তাকে অপরহরণ করা হয়। ৪/৫ দুর্বৃত্ত মুখে কাপড় বেঁধে তাকে অজ্ঞাত স্থানে ছেড়ে দেয়। পরে সাদা স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষরও নেয় ও বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তাকে ১ হাজার টাকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। রহিমা বেগমের দাবি, তিনি কিছুই চিনতে পারছিলেন না। পরে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর হয়ে পূর্ব পরিচিত ভাড়াটিয়া ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে যান। তার কাছে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান রহিমা বেগমের বরাতে এসব তথ্য জানান। তবে তার বক্তব্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এর আগে উদ্ধারের পর ১৬ ঘণ্টা নিখোঁজের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। তবে গতকাল দুপুরে পিবিআই, খুলনার অফিসে সন্তানদের মুখোমুখি করার পর তিনি মুখ খোলেন। দুপুরের পর মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় রহিমা বেগমকে। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারক মো. আল আমিন। পরে তার মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে শনিবার ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুরে আবদুল কুদ্দুসের বাড়ি থেকে উদ্ধারের পর রাতেই তাকে খুলনায় আনা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। আবদুল কুদ্দুস এক সময় খুলনা সোনালী জুট মিলে চাকরি করতেন ও প্রায় ২৮ বছর আগে রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিলেন। পিবিআই, খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর রহিমা বেগম প্রথমে কয়েকদিন বান্দরবান ছিলেন। তারপর চট্টগ্রাম ও গোপালগঞ্জ হয়ে ফরিদপুরে আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে যান। তিনি বলেন, রহিমা বেগমের কাছে সাদা রঙের শপিং ব্যাগে ওড়না, হিজাব, আয়না, শাড়ি, ওষুধ, ব্যবহৃত স্যালোয়ার কামিজ উদ্ধার হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে একজনকে অপহরণ করলে তার সঙ্গে এগুলো থাকার কথা নয়। জানা যায় রহিমা বেগমকে খুলনায় আনার পর নিখোঁজ বিষয়ে পুলিশ কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি মুখ খোলেননি। পরে ভোররাতে তাকে পুলিশ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখান থেকে গতকাল সকাল ১০টার দিকে পিবিআইর কাছে রহিমা বেগমকে হস্তান্তর করা হয়।

যেভাবে খোঁজ মিলল : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে গিয়ে রহিমা বেগম জানান, ছেলেমেয়েদের ওপর রাগ করে তিনি ঘর ছেড়েছেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কথা বলেন তিনি। ১৭ সেপ্টেম্বর বিকালে একটি বাসে করে রহিমা বেগম সৈয়দপুরের বাসস্ট্যান্ডে নামেন। এ সময় তার হাতে একটি ব্যাগ ছিল। সেখান থেকে তিনি আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে পৌঁছেন।

তিনি ওই বাড়িতে স্বাভাবিকভাবেই দিনগুলো কাটিয়েছেন। আবদুল কুদ্দুসের ভাগ্নে মোহাম্মদ জয়নাল বলেন, শুক্রবার ফেসবুক এবং বিভিন্ন অনলাইনে রহিমা বেগমের ছবি দেখে তিনি ইউপি সদস্য মোশারফ মোল্লাকে বিষয়টি জানান। মোশারফ মোল্লা খুলনা সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিষয়টি খুলনা পুলিশকে জানান। এরপর পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় তিনি ওই বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। কিন্তু পুলিশকে দেখে তিনি চুপ হয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়ি থেকে কুদ্দুসের স্ত্রী হীরা বেগম (৬০), ছেলে আল আমিন (২৫) ও কুদ্দুসের ভাইয়ের স্ত্রী রাহেলা বেগমকে (৪৫) হেফাজতে নেয় পুলিশ।

পিবিআইর বক্তব্য : নিখোঁজের বিষয়ে পিবিআই অফিসার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, রহিমা বেগম মহেশ্বরপাশার যে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন, সেখানে ২৮ বছর আগে আবদুল কুদ্দুস ভাড়া থাকতেন। সেই পরিচয়ের সুবাদে তিনি কুদ্দুসের বাড়ি খুঁজে বের করেন এবং ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে উদ্ধার করার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন। পুলিশ সুপার বলেন, রহিমা বেগমের সঙ্গে প্রতিবেশীদের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। সে বিরোধকে ঘিরে এ ঘটনা ঘটছে কি না তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এর আগে রহিমা বেগমকে অপহরণের অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কি না তদন্ত করা হবে।

মাকে ফিরে পাওয়ায় সন্তুষ্টি : নানা নাটকীয়তার পর মাকে ফিরে পেয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে তার মেয়েরা। রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান জানান, এই সংবাদটা আমার জন্য খুশির সংবাদ। এখন আমি মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তার কাছে থাকতে চাই। ২৯টা দিন তিনি কোথায় ছিলেন কেমন আছেন- এতদিন জানতাম না। এখন মাকে দেখে মনে শান্তি ফিরেছে। তবে রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী আক্তার জানান, অনেকে অভিযোগ করছেন আমরাই আমাদের মাকে আত্মগোপনে রেখেছি। কিন্তু আমাদের ছয় ভাই-বোনের সঙ্গে এই ২৯ দিনে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। যদি আত্মগোপনের পেছনে আমাদের কারও সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয় তাহলে যে কোনো শাস্তি মেনে নিতে রাজি আছি।

এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে রহিমা বেগমের মেয়েরা ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক নারীর লাশকে ‘নিজেদের মায়ের লাশ’ দাবি করলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। উদ্ধার হওয়া লাশের পরনের কাপড় দেখে প্রাথমিকভাবে নিজের মায়ের লাশ বলে জানায় রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান।

এদিকে রহিমা বেগমের স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকার ঘটনা অপহরণ দাবি করে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলায় হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী আসামিদের পরিবার। তারা অবিলম্বে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারদের মুক্তি দাবি করেছেন। উল্লেখ্য, ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনা মহেশ্বরপাশার নিজ বাড়ির দোতলা থেকে নিচে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। সে সময় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদার বাড়িতে ছিলেন। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় মামলার পর পুলিশ ও র‌্যাব ছয়জনকে গ্রেফতার করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর