সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফুটবল উৎসবে মাতোয়ারা বিশ্ব

ফুটবল উৎসবে মাতোয়ারা বিশ্ব

কাতারে গতকাল বিশ্বকাপ ফুটবলের চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান -এএফপি

উৎসবের শহর কাতারের আল খোর। বিশ্বের শত শত কোটি ফুটবলপ্রেমীর চোখ এ শহরে। সত্যি বলতে, এ শহরের আল বাইত স্টেডিয়ামে। এই একটা বিন্দু সারা বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে গতকাল। বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও উদ্বোধনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় আল খোর শহরের আল বাইত স্টেডিয়ামে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তখনো অনেকটা সময় বাকি। মধ্য দুপুরে প্রচন্ড উত্তাপের মধ্য দিয়ে দোহা থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরের শহর আল খোরের দিকে এগিয়ে যান হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী। আল বাইত স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে দেখা যায় মরুভূমির রুক্ষতা। মরুভূমির এ রুক্ষতাকে জয় করে বিভিন্ন স্থানে কাতার গড়ে তুলেছে দৃষ্টিনন্দন সবুজ-শ্যামল বিভিন্ন ফার্ম। কোথাও ফলছে সবজি। কোথাও ফলের বাগান। কোথাও ফুলের। আল খোর শহরের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ে বিরাট  আকারের খিমার (মরুভূমির তাঁবু) মতো দেখতে আল বাইত স্টেডিয়াম। ৬০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এ স্টেডিয়ামের চারপাশে কাতার গড়ে তুলেছে পার্ক, লেকসহ আরও নানা স্থাপনা। গতকাল দর্শকরা ফুটবলের উন্মাদনায় মেতে উঠতে এসে কাতারের এ স্থাপনা দেখেও অভিভূত। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সমর্থকরাও গতকাল এসেছিলেন কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ দেখতে। আর্জেন্টিনা থেকে আসা মারকুয়েজ বলছিলেন, কাতার দারুণ এক বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে। তাদের প্রশংসা করতেই হয়। ফুটবল বিশ্বকাপে এসে সারা দুনিয়া যেন এক গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখানে খেলার মাঠে আছে শত্রুতা। নিজ নিজ দলের পক্ষে তারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কোরাস গায়। জাতীয় সংগীত গায় নিজ নিজ দেশের ভাষায়। খেলার মাঠের বাইরে ফ্যান ফেস্টিভ্যালে গিয়ে সেই তারাই আবার একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরে। একে অপরকে পানশালার সঙ্গী করে। নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি অপরের সংস্কৃতিটাও গ্রহণ করে পরম আদরে। এক ব্রাজিলিয়ান দর্শক যেমন হলুদ রঙের জুব্বা পরে চলে আসেন। তেমনি কাতারিয়ানরাও নিজেদের ঐতিহ্য জুব্বার কথা ভুলে গায়ে জড়িয়ে নেয় প্রিয় দলের জার্সি। গতকাল কাতারের বিপক্ষে ম্যাচ হওয়ায় ইকুয়েডরের দর্শকরা বেশ আগেই আল বাইত স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রবেশ করেন। হলুদ রঙের জার্সি গায়ে জড়িয়ে তারা মাঠে আসেন। অন্যদিকে হাজার হাজার কাতারিয়ান পুরুষ দর্শক আসেন সাদা লম্বা জুব্বা গায়ে। মেয়েরা আসেন কালো কাপড়ে নিজেদের জড়িয়ে। দুই দলের সমর্থকরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর আগেই মাঠ নিজেদের দখল নেন। নিজ নিজ দলের পক্ষে সমর্থন দিতে থাকেন। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর সবার কণ্ঠই চাপা পড়ে যায়। পুরো স্টেডিয়াম মেতে ওঠে গানের তালে তালে। চোখ ধাঁধানো নানা রঙের লাইটিংয়ে চমকে ওঠেন দর্শকরা। সঙ্গে ইংরেজি, আরবি, স্প্যানিশ গানেও মুগ্ধ হন তারা। কাতার ও ইকুয়েডর দলের বাস স্টেডিয়ামের বিগ স্ক্রিনে দেখানো হলে সঙ্গে সঙ্গে পুরো স্টেডিয়াম সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে। পতাকা উড়িয়ে, নেচে-গেয়ে তারা নিজ নিজ দলকে সমর্থন দিতে থাকে।

শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ। চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ফুটবলের আনন্দ ছড়িয়ে দিয়েছে কাতার-ইকুয়েডর। আগামী একটা মাস কেবলই ফুটবলের। চায়ের টেবিলে, হোটেল-রেস্টুরেন্টে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডার স্থানগুলোতে, ক্যাফেটেরিয়ায় কিংবা বাস-ট্রামে-ট্রেনে সারা দুনিয়ার মানুষের মুখে কেবল ফুটবলের কথাই শোনা যাবে। বিতর্ক ভুলে, যুদ্ধ ভুলে, জীবনের সংগ্রাম ভুলে ফুটবলের আনন্দে মেতে উঠুক পুরো দুনিয়া। কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে এমন আশাই করছেন ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো।

সর্বশেষ খবর