রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনা

মানুষ মারলে একটাকেও ছাড়ব না

♦ খুনিদের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে? ♦ আন্দোলনে বাধা দেওয়া হচ্ছে না ♦ যাদের ইচ্ছা নির্বাচন করবে ♦ বিএনপির অত্যাচার ছিল হানাদার বাহিনীর মতো

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানুষ মারলে একটাকেও ছাড়ব না

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আন্দোলন করেন, মিছিল-মিটিং করেন, কোনো আপত্তি নেই। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারলে একটাকেও আর ছাড়ব না।

গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি-জামায়াতের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ওপর হামলা হয়েছে সহ্য করেছি, তবে মানুষের ওপর হামলা হলে সহ্য করব না। আমরা সহ্য করছি, তবে এটাকে অনেকে দুর্বলতা মনে করছে। এটা আমাদের দুর্বলতা নয়। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, আমাদের সঙ্গে আছে। খুনিদের সঙ্গে নেই। এবার মানুষের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলে কাউকেই ছাড়ব না। বিএনপির আন্দোলনে সরকার বাধা দিচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু যেভাবে তারা ওই অত্যাচারগুলো করেছিল আমরা ভুলব কীভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কীভাবে? তার ওপর তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, এটা কোনো মানুষের কাজ? জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারা, এটাই নাকি বিএনপির আন্দোলন!

কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই বলেন, তাদের সঙ্গে ডায়ালগ (সংলাপ) করতে। কার সঙ্গে ডায়ালগ করব? বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান অর্থ পাচারকারী, অস্ত্র পাচারকারী ও হত্যাকারী। এখন ওই দুর্নীতিবাজ সাজাপ্রাপ্ত এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ পাচারকারী, অস্ত্র পাচারকারী আর গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারী- এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে? আর জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। এদের সঙ্গে ডায়ালগের কথা বলা, অন্যদিকে মানবাধিকারের কথা বলা-এটা কেমন ধরনের কথা? তিনি বলেন, যে খালেদা জিয়া বলেছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসা তো দূরের কথা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবেন না। আর আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না। আল্লাহতায়ালা এই ধরনের গর্ব করা পছন্দ করেন না। আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করেন না। সেই জন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলাই লেগে গেছে। খুনিদের সঙ্গে আমাদের ডায়ালগ করতে হবে? কোনো সংলাপ হবে না। বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। জনগণ নির্বাচনে ভোট দেবে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে। নির্বাচন কমিশন আছে। তাই আগামী নির্বাচনে যাদের ইচ্ছা নির্বাচন করবে। আর নির্বাচন করার মতো শক্তি যদি কারও না থাকে, তারা হয়তো নির্বাচন করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে, তারা ভোট দেবে। আর ভোট চুরি করলে দেশের জনগণ মেনে নেয় না। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছিল। তাই আমি আমাদের  মেয়েদের বলব, ভোটের অধিকার সবার। যে কোনো নির্বাচনে আমাদের মহিলারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন। সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ।

এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ৩টায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিছিলের ঢল নামে। পৌনে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে পৌঁঁছানোর আগেই বিশাল সম্মেলন প্যান্ডেল ছাপিয়ে আশপাশের সব জায়গায়  লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রোকেয়া প্রাচীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক পর্বে ‘রক্ত লাল’ ‘তুমি হৃদয়ের ধ্রুবতারা’ ‘জয় বাংলা-বাংলার জয়’ ‘জাগো নারী জাগো’সহ মহিলা আওয়ামী লীগের দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর গীতিনৃত্য এবং সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগই এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আজ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, পুরো বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন ও হামলার শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর যে আঘাত দেওয়া হয়েছে আমরা তা ভুলিনি। আমরা সহ্য করছি। তবে এটা দেখে মনে না করে যে, সহ্য করাটা আমাদের দুর্বলতা। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, আমাদের সঙ্গে আছে। খুনিদের সঙ্গে নেই। তিনি বলেন, আমরা তাদের (বিএনপি) বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু যেভাবে তারা ওই অত্যাচারগুলো করেছিল আমরা ভুলব কীভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কীভাবে? তার ওপর অগ্নিসন্ত্রাস, এটা কোনো মানুষের কাজ? জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারা, এটাই নাকি বিএনপির আন্দোলন!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। ২০০১-এর নির্বাচনের পর যেভাবে বিএনপি এবং জামায়াতের সন্ত্রাসীরা মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে, বাংলাদেশে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এই অত্যাচারের শিকার না হয়েছে। মা-মেয়েকে একসঙ্গে ধর্ষণ করেছে-গণধর্ষণ করেছে।

বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে কোনো নারী ডিসি হতে পারত না, সচিব হতে পারত না। আমরা সচিব, ডিসি এবং এসপি হিসেবে নারীদের সুযোগ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে নারী অধিকার রক্ষা করতে হবে। আমি নারীদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছি। নারীদের বিনা চিকিৎসার সুবিধা আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারীদের জন্য নির্দিষ্ট আওয়ামী সরকারই করেছে। তিনি আরও বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল তৈরি করা হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ আছে। প্রতিটি পরিবারে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের হিসাব করেই ঘর দেওয়া হয়েছে। নারীরা সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্মেলনে মায়েদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ছেলে-মেয়ে যাতে নিজের মনের কথা মায়ের কাছে বলতে পারে, সে পরিবেশ করতে হবে। তাহলে তারা বিপথগামী হবে না। এ ক্ষেত্রে মায়ের বিরাট ভূমিকা আছে, সেটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। এতে মেয়েরা চিকিৎসা পায়। মেয়েরাই চাকরি করে। সারা দেশে ৩০ হাজার নার্স ও ৪৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছি। দুগ্ধপানকারী মায়ের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করে দিয়েছি। নারীদের সব ধরনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্মই একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। স্বামী ও বাবার সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম। অথচ ধর্মের নামে নারীদের ঘরে রেখে দিতে চায়, তারা জানে না।

তিনি বলেন, যে কোনো অর্জনে নারীদের অবদান থাকতে হবে। সমাজের অর্ধেক নারী। তারা অচল থাকলে সমাজ এগোবে না। নারী-পুরুষকে সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে। আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি, এসপি হিসেবে নিয়োগ    পাওয়ার পথ সুগম করেছি। আজকে আমাদের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে মেয়েরা ভালো করে বিশ্বের প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ স্ত্রীকে ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে।

সর্বশেষ খবর