রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ঋণের দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আরও ২৫ কৃষক

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার ঈশ্বরদীতে ২৫-৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগের মামলায় জেলে যাওয়া ১২ কৃষককে কারাগারে পাঠানোর পর গ্রেফতারের  ভয়ে ২৫ কৃষক বাড়িছাড়া। এ ৩৭ কৃষকের পরিবার চরম হতাশা আর দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন। অধিকাংশ পরিবারই জানে না কী করে আদালতের মাধ্যমে জামিন করাতে হয়। হতদরিদ্র এসব কৃষকের অনেকেই ঋণের টাকা পরিশোধ করার দাবি করলেও পরিশোধের কাগজপত্র তাদের কাছে নেই।

গতকাল ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ গ্রামবাসীই গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন কী বলতে কী বলে ফেলবেন ভেবে। অধিকাংশ বাড়িই পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে পুরুষশূন্য। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতার এড়াতে তারা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ভাড়ইমারি উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমিতির সভাপতি ও ছলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য বিলকিস নাহারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ভাড়ইমারি উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতি নামের একটি সমিতি রয়েছে। এতে মোট সদস্য সংখ্যা ৩৭। ২০১৬ সালে সদস্যরা বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক থেকে গ্রুপভিত্তিক ঋণ নেন। ঋণের বরাদ্দ ছিল মোট ১৬ লাখ টাকা। এ টাকা ৩৭ জনের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হয়। তবে কেউ কেউ একটু কম-বেশি করে ঋণ নেন। অনেকেই এ ঋণের টাকা পরিশোধ করেছেন। আবার অনেকের ২ থেকে ৫ হাজার বাকি আছে। সাত কৃষক টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে গ্রুপভিত্তিক ঋণের কারণে সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যারা টাকা পরিশোধ করেছেন তাদের অনেকের কাছে পরিশোধ রসিদও নেই। আমি নিজেও আত্মগোপনে আছি। তবে যত দ্রুত সব কৃষকের জামিনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।’ কৃষকরা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের ধারণায়ও ছিল না। অনেকেই বিষয়টি ভুলেও গেছি। আমরা সবাই মূর্খ মানুষ। মাঠে কাজকর্ম করে দিন পার করি। হঠাৎ করেই গ্রেফতারের পর বিষয়টি জানাজানি হয়েছে।’

গ্রেফতার ব্যক্তিদের পরিবারের লোকজন বলেন, ‘আমরা তো আইন-আদালত বুঝি না। যাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাদের ছাড়ানোর জন্য স্থানীয় মেম্বারের কাছে আমরা গেছিলাম। চেয়ারম্যানের সঙ্গে মেম্বার কথা বলে তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘আমরা যতটুকু শুনেছি, সেটি হলো ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিলেও কৃষকরা ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। এর পরও নাকি ১২ লাখ টাকা পাওনা। তাই সমবায় ব্যাংক মামলাটি করেছে। তবে ওই সমিতির সদস্যদের এত টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য আছে বলে আমার মনে হয় না।’

ছলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বাবলু মালিথা বলেন, ‘বিষয়টি যদিও কষ্টের, তবু ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক কাজ করেছে। বিষয়টি আমাদেরও জানা ছিল না। আমি ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে খোঁজখবর নিয়ে অতি দ্রুত একজন আইনজীবী নির্ধারণ করার কথা বলেছি। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় পুলিশের ভয়ে লোকজন হয়তো পালিয়ে আছে। আমি নিজেও থানার ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলব বিষয়টি নিয়ে। একেবারেই লেখাপড়া না জানা কৃষক, তারা আইন-আদালত খুবই ভয় পান বলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, অল্প টাকা ঋণের দায়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের ৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তাদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।

সর্বশেষ খবর