রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মেসি ম্যাজিকে আর্জেন্টিনার জয়

লিওনেল মেসির চোখ ফেটে বেরিয়ে এলো অশ্রু। হাত দিয়ে আকাশের দিকে কাকে যেন দেখাতে চাইলেন। দিয়েগো ম্যারাডোনাকে কি! হবে হয়তো। বিশ্বকাপে দিয়েগো ম্যারাডোনা, ২১ ম্যাচে ৮ গোল। বিশ্বকাপে লিওনেল মেসি, ২১ ম্যাচে ৮ গোল। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে ম্যাচ আর গোলের সংখ্যায় ছুঁয়ে দিলেন মেসি। সেই ক্ষণটাকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে রাখলেন তিনি।

একটা মাত্র গোল। মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচের ৬৪ মিনিটে ডি বক্সের বেশ কয়েক গজ বাইরে বল পেয়ে মাটি গড়ানো শটে কয়েকজন ডিফেন্ডার আর গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান মেসি। এই একটা গোল আর্জেন্টিনার সব দুশ্চিন্তাই যেন গায়েব করে দিল! দর্শকসারিতে হাজার হাজার সমর্থক কুর্নিশ করছিলেন ফুটবলের সম্রাট লিওনেল মেসিকে। উচ্চৈঃস্বরে গাইছিলেন ‘মেসি, মেসি’ কোরাস। ম্যাচটা এভাবেই হয়তো শেষ হয়ে যেত। কিন্তু লিওনেল মেসির ম্যাজিকের বাক্স থেকে বেরিয়ে এলো আরও        একটা জাদু। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে একটি শট কর্নার কিকের পর লিওনেল মেসির পাসে বল পেয়ে ডি বক্সের ভিতর থেকে গোল করেন ফার্নান্দেজ। ৫৭ মিনিটে রদ্রিগেজের পরিবর্তে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। এই গোলটার পর আর্জেন্টাইনদের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা যায় গ্যালারিতে। কেবলই কি লুসাইল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে? আটলান্টিকের ওপাড়ে সুদূর আর্জেন্টিনায় এবং সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা লিওনেল মেসির ভক্তদের মধ্যেও ছিল একই উচ্ছ্বাস। মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে কেবল টিকেই রইল না আর্জেন্টিনা, শীর্ষ ফেবারিটদের সারিতে নিজেদের নাম রাখার যৌক্তিকতাও প্রমাণ করল।

আর্জেন্টিনা দলে পাঁচ পরিবর্তন এনে মাঠে নামে গতকাল। সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম একাদশে খেলা মলিনা, রোমেরো, ট্যাগলিয়াফিকো, পাপু গোমেজ এবং প্যারেডেসের স্থানে গতকাল দলে ছিলেন মন্টিয়েল, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, আকুনা, রদ্রিগেজ এবং ম্যাক অ্যালিস্টার। বলতে গেলে পুরো একাদশই ঢেলে সাজান আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। মেক্সিকো দলেও ছিল তিনটি পরিবর্তন। পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে থাকা সানচেজ, মার্টিন আর এডসন আলভারেজরা গতকাল একাদশে ছিলেন না। তাদের পরিবর্তে মেক্সিকো দলে ছিলেন কেভিন আলভারেজ, গুয়ারডাডো ও আরাউহো। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিজেদের সেরা দলটাকেই মাঠে নামান কোচ জেরার্ডো মার্টিনো। এক সময় তিনি বার্সেলোনায় এবং আর্জেন্টিনায় লিওনেল মেসিদের গুরু ছিলেন। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কৌশল ঠিক করেন মার্টিনো। কৌশলে কোনো ফাঁকফোকর ছিল না। নিজেদের ডি বক্সের চারপাশে দুর্ভেধ্য দেওয়াল দাঁড় করিয়ে দেন মার্টিনো। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাইনকে কাছেই ঘেঁষতে দেওয়া যাবে না, এমন বার্তা দিয়েছিলেন তিনি শিষ্যদের কানে কানে। সফলও হয়েছিল মেক্সিকো। অন্তত ৬৪ মিনিট পর্যন্ত অন টার্গেটে আর্জেন্টিনা কোনো শট নিতে পারেনি, এটাই তো তার প্রমাণ। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার টিকে থাকার লড়াই ছিল। লিওনেল মেসির টিকে থাকার লড়াই। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে পরাজয়ে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় গতকাল সৌদি আরবের বিপক্ষে পোল্যান্ডের ২-০ গোলের জয়। এমনকি ড্র করাটাও বড় বিপদের কারণ হতে পারে আলবেসিলেস্তদের জন্য। সমীকরণটা জেনেই মাঠে নেমেছিলেন লিওনেল মেসিরা।

প্রথমার্ধে দুয়েকটি বিক্ষিপ্ত আক্রমণ ছাড়া আর্জেন্টিনার কাছ থেকে আর কিছুই দেখা যায়নি। শিষ্যদের প্রথমার্ধের খেলা দেখে লিওনেল স্কালোনি কেবল মাথায় হাত বুলাচ্ছিলেন। এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম পুরো স্টেডিয়ামে থাকার পরও বারবার ঘাম মুছতে হচ্ছিল আর্জেন্টিনার কোচকে। বল দখলের লড়াইয়ে কিংবা পাসিংয়ে মেক্সিকো অনেক পিছিয়ে থাকলেও আক্রমণের সংখ্যায় এগিয়ে ছিল। ম্যাচের ৬৪ মিনিট পর্যন্ত অন টার্গেটে কোনো শটই নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। অথচ প্রথমার্ধেই মেক্সিকোর অন টার্গেটে শট ছিল। মেক্সিকোর অ্যালেক্সিস ভেগার একটা শট পাখির মতো ঝাঁপিয়ে না ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। না হলে বিপদেই পড়ত আলবেসিলেস্তরা।লিওনেল মেসি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত মঞ্চে আর্জেন্টিনার আকাশি নীল-সাদা জার্সিতে ম্যাচ আর গোলের সংখ্যায় দিয়েগো ম্যারাডোনাকে স্পর্শ করলেন। বাকি কেবল বিশ্বকাপের ট্রফি জয়ের দিকটা। এবার কি তবে ওদিকটাও হয়ে যাবে! আর্জেন্টাইন সমর্থকরা আশায় আছে। শেষ পর্যন্তও এই আশা ছাড়তে রাজি নয় তারা। পূরণ হবে কী তাদের বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের এই স্বপ্ন! ব্রাজিলের কোপাকাবানা সৈকতে যে উৎসব অপূর্ণ থেকে গিয়েছিল তা কি পূর্ণতা পাবে আরব উপসাগরের তীরে, দোহার বিখ্যাত এলাকা কোরনিশে!

সর্বশেষ খবর