রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিশ্ব ইজতেমা

লাখো মুসল্লি তুরাগ তীরে, আজ আখেরি মোনাজাত

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

লাখো মুসল্লি তুরাগ তীরে, আজ আখেরি মোনাজাত

আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্ব। ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে তিনি হিদায়াতি বয়ান করবেন। বেলা ১১টার মধ্যে মোনাজাত হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমা কর্তৃপক্ষ।

ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, লাখো মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে তুরাগ-তীর। গতকালও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। এদিন সকালেই টঙ্গী এবং ইজতেমাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ইজতেমা ময়দান। আজ আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের ঢল অব্যাহত থাকবে। মূল প্যান্ডেলে স্থান না পেয়ে অনেক মুসল্লি প্যান্ডেলের বাইরে পলিথিন শিট ও কাপড়ের সামিয়ানা টানিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। দেশের ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা ৮৫ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার মধ্যরাত থেকে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। এবারের বিশ্ব ইজতেমা নজিরবিহীন নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ময়দানসহ আশপাশের এলাকা পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। তল্লাশি পেরিয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হচ্ছে। প্রায় ১২ হাজার র‌্যাব ও পোশাকধারী পুলিশের পাশপাশি প্যান্ডেলের ভিতর ও বাইরে মুসল্লি বেশে রয়েছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৩ হাজার সদস্য। আকাশ ও নৌপথে রয়েছে র‌্যাবের সতর্ক নজরদারি। সব প্রবেশপথে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।

যারা বয়ান করলেন : প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ইমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর বয়ান হয়। গতকাল বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইয়াকুব জিলানী। তিনি তাবলীগের ৬ উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর বয়ান করেন। বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। বাদ জোহর বয়ান করেন তুর্কির মাওলানা ওমর। বাদ আসর মাওলানা সাদ কান্ধলভীর তৃতীয় ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী বয়ান করেন। বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা ওসামা ইসলাম। মাগরিবের পর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুস সাত্তার। বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম।

বয়ানে যা ছিল : বয়ানে তাবলীগের মুরুব্বিরা বলেন, আল্লাহতায়ালা আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দুনিয়ায় যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এ সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। দুনিয়ার জিন্দেগি ক্ষণস্থায়ী। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দিল থেকে আসবাবের (সম্পদের) একিন বের না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দিলে কুদরতি একিন পয়দা হবে না। সবাইকে দীনের জন্য মেহনত করতে হবে। আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া এ দুনিয়ার জিন্দেগীর কোনো মূল্য নেই। দীনের দাওয়াতের মাধ্যমে ইমান মজবুত হয়। ইমান মজবুত হলে আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবি হাসিল হয়। 

তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসল্লি : ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় গমনেচ্ছু মুসল্লিদের এ কামরায় আনা হচ্ছে। কাকরাইলের মসজিদের তাবলিগি মুরব্বিদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকা ভাগ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাবলিগি কাজে পাঠানো হবে।

আরও চার মুসল্লির মৃত্যু : টঙ্গীতে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আসা আরও চার মুসল্লি মারা গেছেন। শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তারা মারা যান। এ নিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু হলো। তারা হলেন-ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান (৪৫), গাইবান্ধার আব্দুল হামিদ মন্ডল (৫৫), রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকার ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন (৪৮) ও ঢাকার সাভারের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম (৫৪)। মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম জানান, শুক্রবার এশার নামাজের সময় খিত্তায় বসে জিকির করা অবস্থায় আব্দুল হান্নান অজ্ঞান হয়ে সেখানেই মারা যান। ব্যবসায়ী বোরহান একইদিন রাত ১১টায় খিত্তায় অবস্থানকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং সন্ধ্যায় গাইবান্ধার শুক্কুর মন্ডল মারা যান। এছাড়া একইদিন ভোরে সাভারের শিমুলতলী এলাকার মফিজুল ইসলাম মারা যান।

যৌতুকবিহীন বিয়ে : প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়েছে। গতকাল বাদ আসর ১৫টি বিয়ে হয়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী।

শেষদিনে যারা বয়ান করবেন : আজ শেষদিনে ফজরের পর বয়ান করবেন মাওলানা মুরসালিন। এরপর হিদায়াতি বয়ান ও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী। বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম।

বিদেশি মুসল্লি : গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে বিশ্বের ৬১টি দেশের ৭ হাজার ৭২৫ জন বিদেশি মুসল্লি অংশ নেন। তাছাড়া এ পর্বে দেশের ৬৪টি জেলার কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরে জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।

শ্যাটল বাস ও বিশেষ ট্রেন : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম জানান, গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ আখেরি মোনাজাতের দিন বিকাল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মীরের বাজার থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড হয়ে কামারপাড়া ও সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ঢাকা বাইপাস সড়কের ভোগড়ায়, শাখা রোড বোর্ডবাজার, মীরেরবাজার থেকে আসা প্রত্যেকটি সড়ক ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে আজ ভোর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত শ্যাটল বাস (ইজতেমার স্টিকার লাগানো) চলাচল করবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ট্রাফিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেনগুলো টঙ্গী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।

যার যার ডাইনে চলি ভাই : ময়দানের প্রতিটি প্রবেশপথে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী কর্মী কাজ করছেন। যার যার ডাইনে চলি, জিকিরে ফিকিরে চলি ভাই এসব কথা বলে মুসল্লির চলাচলের সুবিধা দিচ্ছেন। মুসল্লিরাও তাদের কথামতো ডাইনে চলছেন। আর আল্লাহু আল্লাহু বলে জিকির করছেন।

সর্বশেষ খবর