মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

লজ্জিত হওয়া উচিত সব আইনজীবীর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা নিয়ে হাই কোর্টের মন্তব্য কুলিরাও এমন করে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

এজলাস চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচারবিঘ্নিত করার ঘটনায় ‘সব আইনজীবীর লজ্জিত হওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন হাই কোর্ট। ওই ঘটনায় হাই কোর্টের তলবে ২১ আইনজীবীর হাজিরের পর গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে ২১ আইনজীবীর পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচারকাজে বিঘ্ন সৃষ্টির অভিযোগে গত ১০ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জনের নামে আদালত অবমাননার রুল জারি করে তাদের তলব করেন হাই কোর্ট। সে তলবে গতকাল তারা আদালতে হাজির হন। শুনানির শুরুতে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ২১ জন হাজির হয়েছেন। আদালত অবমাননার আরেকটি বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ রয়েছে। দুটি রুলের একসঙ্গে শুনানি হোক। তখন আদালত বলেন, দুটি ঘটনা এক না। ওইটা ছিল এক ধরনের ইনসিডেন্ট, এটা আরেক ধরনের ইনসিডেন্ট। ওইটা ছিল অ্যারোগেন্সি, বেয়াদবি। আর এটা হচ্ছে অশ্লীল। কোনো ভদ্রলোক, এসএসসি পাস করা লোকও এ রকমটা বলে না। আদালত আরও বলেন, ২১ জনের মধ্যে দুজন শিক্ষানবিশ আছেন, তারা কারা? এ সময় এ দুই শিক্ষানবিশ ও তাদের পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ করে আদালত বলেন, অশ্লীল স্লোগান! কমলাপুরের কুলিরাও তো এমন করে না। এগুলো কোনো ভাষা? সমস্ত আইনজীবী শ্রেণির লজ্জিত হওয়া উচিত। কালো পোশাকধারী কোনো ব্যক্তি এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারে? শ্রমিকদের মিছিলেও তো এ রকম স্লোগান দিতে দেখি না। এটা কোনো রাজনৈতিক ভাষা, আন্দোলনের ভাষা! এ তো অশ্লীল! তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল বলেন, সময় দেন (আদালত অবমাননা রুলের ব্যাখ্যা দিতে), তারপরে বিষয়টি আসুক। আদালত বলেন, কী আসবে। গত দিনও সময় দিয়েছি। আজকেও সময় দিচ্ছি। কিন্তু আমরা খুবই চিন্তিত। এ সময় মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আমরাও। জুডিশিয়ারি আমাদের সবার। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আদালত বলেন, তাই যদি হয়, যে গালি আপনারা (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা) দিয়েছেন, তা আপনার গায়েও লেগেছে। তখন মোমতাজ উদ্দিন ফকির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে কী ঘটেছে, কে স্লোগান দিয়েছে না দিয়েছে, দিয়ে থাকলে কী উদ্দেশ্য ছিল, তা দেখবেন বলে আদালতকে আশ্বস্ত করেন। আদালত বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত নিম্ন আদালতের গার্ডিয়ান সুপ্রিম কোর্ট। আমাদের দায়িত্ব আছে। আপনাদের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা আপনারা বলতে পারেন। আপনাদের বিজ্ঞ বলে, আমাদেরও বিজ্ঞ বলে। বিজ্ঞের সঙ্গে ওই শব্দগুলো যায়? একপর্যায়ে হাই কোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের পরিস্থিতি জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের সদস্য আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোর্ট চলছে। বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আগামী ২৮ তারিখে সাধারণ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা থাকবেন। ওই সভা থেকে দেশের সমস্ত বারে আমরা বার্তা দেব। তারপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাব ইনশাল্লাহ।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য জানতে চান আদালত। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনারা সময় চেয়েছেন, সময়টা দেন। এর মধ্যে বার কাউন্সিলের সদস্য যেটি বললেন ২৮ তারিখে সভার কথা। সব আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিরা আসবেন। আলোচনা করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদক আছেন। আদালত বলেন, কোর্টের যে বার্তা, তা বলবেন। আমরা ইচ্ছা করলে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারি। আজীবনের জন্য লাইসেন্স বাতিল করে দিতে পারি। বার কাউন্সিলের আচরণবিধির লঙ্ঘন, জাতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের লঙ্ঘন, আদালত অবমাননা তো আছেই। সুতরাং যেতে চাইলে আমরা অনেক যেতে পারি। তাদের কনডাক্ট, বিহেভিয়র... জুনিয়র। আর ৬৪ জেলার বিষয় এটি। তাদের বার্তা দেবেন। এরপর রুলের ব্যাখ্যা দিতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন হাই কোর্ট। তলবে হাজির হওয়া আইনজীবীরা হলেন- জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মফিজুর রহমান বাবুল, অ্যাডভোকেট মিনহাজুল ইসলাম, এমদাদুল হক হাদি, নিজামুদ্দিন খান রানা, আনিছুর রহমান মঞ্জু, মো. জুম্মন চৌধুরী, রাশেদ মিয়া হাজারী, জাহের আলী, মো. আ. আজিজ খান, দেওয়ান ইফতেখার রেজা রাসেল, মো. ছদর উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান রনি, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আরিফুল হক মাসুদ, মীর মোহাম্মদ রাইসুল আহম্মেদ, মহিবুর রহমান, মো. জাকারিয়া আহমেদ, মো. মোবারক উল্লা, মো. ফারুক আহমেদ, সফিক আহমেদ ও ইকবাল হোসেন।

 

সর্বশেষ খবর