শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির কমিটি আসে লন্ডন থেকে

জেলা উপজেলাসহ দল ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির প্রস্তাব পাঠাতে হয় যুক্তরাজ্যে সেখানে অনুমোদন সংযোজন বিয়োজনের পর হয় চূড়ান্ত

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

কেন্দ্র থেকে শুরু করে শাখা-প্রশাখাসহ বিএনপির সব কমিটি আসে সুদূর লন্ডন থেকে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা শাখা কিংবা অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন যা-ই হোক না কেন, প্রথমে তার প্রস্তাবনা পাঠাতে হয় লন্ডনে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই ও সংযোজন-বিয়োজন শেষে অনুমোদন হয়ে সেই কমিটি ফিরে আসে ঢাকায়। লন্ডনে কমিটি অনুমোদন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় দফতর থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।

পাশাপাশি যে কোনো কর্মসূচি অথবা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অনুমোদন করেন তারেক রহমান। তবে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে তিনি দলের সর্বোচ্চ ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে নেন। এভাবেই চলছে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তারেক রহমান এমন একজন নেতা, যিনি লন্ডনে অবস্থান করলেও কোনো বিষয়ে একা কখনো সিদ্ধান্ত নেন না। দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি, যা আমরা ঢাকায় থেকেও পারি না। বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ভিতরে শতভাগ গণতন্ত্র চর্চা করেন। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে যেসব কথাবার্তা শোনা যায়, তার সবই হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের অপপ্রচার।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরতে দিচ্ছে না। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে লন্ডনে থাকছেন এবং সেখান থেকেই অত্যন্ত সুচারুরূপে দল পরিচালনা করছেন। তার দক্ষতা ও সঠিক নির্দেশনার ফলে দলের প্রতিটি কর্মসূচি সফল হচ্ছে এবং ব্যাপক সংখ্যক জনসমাগম হচ্ছে। তাছাড়া দলের সর্বোচ্চ ফোরাম থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি।

জানা যায়, এক সময় তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপির ভিতরে-বাইরে নানা আলোচনা ও সমালোচনা ছিল। তার দল পরিচালনা নিয়ে শুরুতে সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও কিছুটা অসন্তোষ ছিল। তবে সেই অবস্থা পুরোপুরি কেটে গেছে। সিনিয়র নেতারাও এখন তারেক রহমানের নেতৃত্ব শতভাগ মেনে নিয়েছেন। ফলে বিএনপি নেতৃত্বে এখন কোনো বিভক্তি বা ভিন্ন ধারা কিংবা গ্রুপিং নেই। সব ধারা গিয়ে মিশে গেছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপিতে বর্তমানে তারেক রহমানের একক নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দলটির সিনিয়র নেতারাও এখন স্বীকার করেন যে, তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দল চলছে সাবলীলভাবে। সাংগঠনিক কর্মকান্ড ও দলীয় কর্মসূচিতে বাড়ছে জনসম্পৃক্ততা।

দলে তারেক রহমানের অবস্থান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধু সারা দেশের নেতা-কর্মীরাই নন, সর্বস্তরের মানুষও আজ খুব ভালোভাবে তারেক রহমানকে গ্রহণ করেছেন। অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে এবং আশা নিয়ে তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত তারা বাস্তবায়ন করেন। নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশার দিকে লক্ষ্য রেখে তিনিও সেই কাজটা খুব ভালোভাবেই করে যাচ্ছেন।

দীর্ঘদিনের অসুস্থতা এবং আইনি বাধ্যবাধকতায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির মাঠের বাইরে রয়েছেন। এ কারণে দল পরিচালনায় কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার তার সুযোগ নেই। দলের মহাসচিব দু-এক মাস পরপর ফিরোজায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও অন্য নেতাদের সেই সুযোগ সীমিত। সংগত কারণেই খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আন্দোলনসহ সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই নিয়ে থাকেন তারেক রহমান। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তগুলো নেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে।

দলের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয় জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আগে যেভাবে সিদ্ধান্ত হতো, এখনো সেভাবেই হয়। প্রতি সপ্তাহে আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। প্রতিটি বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থাকেন। সেখানে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং পরে আমরা সভার সিদ্ধান্তগুলো জানিয়েও দিই।

অন্যদিকে, বিভিন্ন কর্মসূচিতে দিন দিন সফলতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি কর্মসূচি পালন করছে। আন্দোলন করতে গিয়ে সম্প্রতি দল ও অঙ্গসংগঠনের ১৫ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। অন্য সময়ে দলীয় কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি করলে নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যেত, এখন তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এসবই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে হয়েছে। কোনো নেতা-কর্মী গ্রেফতার, আহত কিংবা নিহত হলে তারেক রহমান তার পরিবারের দায়িত্ব নেন। প্রতিটি গুম-খুনের শিকার পরিবারের প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখেন। যে কারণে নেতা-কর্মীরা এখন আর দলীয় কর্মসূচি পালনে পিছপা হচ্ছেন না।

এ ছাড়া তৃণমূল থেকে সরাসরি কাউন্সিলের মাধ্যমে এখন নেতৃত্ব নির্বাচন হয়। এ কারণে দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট প্রথা নেই বললেই চলে। কমে গেছে কমিটি বাণিজ্য। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলেরও নতুন কমিটি গঠন করেন তারেক রহমান। ঢাকার দুই মহানগর বিএনপিও এখন অনেক সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। ঢাকায় সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলো পালনের মাধ্যমে তা প্রমাণিত। কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগর উত্তর-দক্ষিণের অধিকাংশ থানা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গত বুধবার রাতেও রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর