বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

টিআইবির চোখে বাংলাদেশ এখন ১২তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় শুধু আফগানিস্তান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২তম। গত বছর যা ছিল ১৩তম অবস্থানে। অর্থাৎ এ বছর আরও এক ধাপ অবনমন হয়েছে। যা প্রমাণ করে যে, গত বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে দুর্নীতি আরও বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে নাম এসেছে আফগানিস্তানের। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

গতকাল বিশ্বব্যাপী ১৮০ দেশের দুর্নীতির চিত্রের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২ প্রকাশ করা হয়। ঢাকায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির অবস্থা তুলে ধরেন। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিচারে গত এক বছরে বাংলাদেশে দুর্নীতি পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হয়েছে, তাতে তাদের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের এক ধাপ অবনমন ঘটেছে। তাদের প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচকের (সিপিআই) ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৭ নম্বরে। ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী গতবারও এ তালিকায় বাংলাদেশ ১৪৭ নম্বরে ছিল। আবার অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বিবেচনা করলে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৮০ দেশের মধ্যে দ্বাদশ, যেখানে গত বছর ছিল ত্রয়োদশ অবস্থানে। এই সূচকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবারও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বাজে অবস্থা কেবল আফগানিস্তানের।

২৪ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) রয়েছে তালিকার ১৫০ নম্বরে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবারের মতোই দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয় ভুটানে। ৬৮ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ২৫ নম্বরে। এরপর ভারত ও মালদ্বীপ ৮৫ (স্কোর ৪০), শ্রীলঙ্কা ১০১ (স্কোর ৩৬), নেপাল ১১০ (স্কোর ৩৪), পাকিস্তান ১৪০তম (স্কোর ২৭)। ২৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সূচকের একই অবস্থানে রয়েছে গিনি ও ইরান। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত এক দশকে দুর্নীতির অবস্থানে বাংলাদেশের কোনো উন্নতি ঘটেনি, বরং খারাপ হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৭ ও পরে ২০২২ পর্যন্ত আমাদের অবস্থান স্থবির জায়গায় আছে। এটা হতাশাব্যঞ্জক বলেই আমরা মনে করি। ১২২টি দেশের সঙ্গে আমাদের অবস্থান, যাদের স্কোর ৫০-এর নিচে। দুর্নীতির অবস্থা যেটা সেটা গুরুতর। আমাদের অবস্থান আরও নিচে। আরও গভীরতর উদ্বেগের মাঝে আমরা আছি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দুর্নীতির চিত্র বিশ্লেষণে তিনি বলেন, আমাদের স্কোর এ বছর এক পয়েন্ট কমেছে, আফগানিস্তানের আট পয়েন্ট বেড়েছে। এটা অব্যাহত থাকলে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের চেয়েও নিচে চলে গিয়ে প্রথম স্থানে চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনের সারমর্মে বাংলাদেশের অবনমনের পেছনে কিছু কারণ তুলে ধরা হয়। ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে শুধুই ‘রাজনৈতিক বক্তব্যে’ সীমাবদ্ধ রাখা, মহামারিকালে সরকারি খাতে সুরক্ষাসামগ্রী থেকে শুরু করে সাধারণের কাছে বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া, রাজনীতি ও ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত সরকারি ও আমলাতান্ত্রিক বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে সেখানে। এ প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জমান বলেন, যারা দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করে, তাদের গলা চেপে ধরা হচ্ছে। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ এখন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মতো বিষয়গুলোর জন্য এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছে না।

সর্বশেষ খবর