বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

লাশের সারি মানবিক বিপর্যয়

♦ তুরস্ক সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে লাশ ♦ আহত ২৫ হাজার ♦ বাড়িঘর ধ্বংস ৫,৭৭৫

প্রতিদিন ডেস্ক

লাশের সারি মানবিক বিপর্যয়

১৫ বছরের মেয়ে ইরমাক চাপা পড়েছে ধ্বংসস্তূপে। বাবা মেসুত হ্যান্সার নির্বাক বসে আছেন তার হাতটি ধরে। অপেক্ষা করছেন উদ্ধারকারী দলের। তীব্র শীতের মধ্যেও মেসুত মেয়ের হাত ছাড়েননি। তুরস্কের কাহরামানমারাস এলাকা থেকে তোলা ছবি -এএফপি

তুরস্ক-সিরিয়ায় সোমবার আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এ সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এতে আহত ছাড়িয়েছে ২৫ হাজার। সেখানে ধসে যাওয়া ভবনের নিচে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি আর আবহাওয়া এতটাই প্রতিকূল যে, উদ্ধারকাজে নেমে হিমশিম খাচ্ছে উদ্ধারকারী দলগুলো। হাড় কাঁপানো শীতও পড়েছে, বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া এত ঠান্ডা যে, জমে যাওয়ার মতো। উদ্ধারকারীদের সেখানে পৌঁছাতে বড় সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাব। সেখানে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞ। বিদ্যুৎ নেই। ইন্টারনেট ও টেলিফোনে ঠিকমতো যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। প্রতিটি বহুতল ভবন যেন এখন ধ্বংসস্তূপের একেকটি পাহাড়। যত দেরি হচ্ছে আটকে পড়া মানুষকে জীবিত উদ্ধার করার সম্ভাবনাও তত কমে আসছে। মৃত ও আহতের সংখ্যা এত বেশি যে, হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোয়ও আর রোগী নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন

সোমবার ভোরে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল তুরস্কের খারমানমারাসের গাজিয়ানতেপ শহর।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেছেন, তুরস্কে মৃতের সংখ্যা অন্তত ৩ হাজার ৫৪৯। আহত হয়েছেন আরও ২২ হাজার ১৬৮ জন। ওরহান তাতার নামে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ৫ হাজার ৭৭৫টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। সিরিয়ায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬০২ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এরদোগান ভূমিকম্পবিধ্বস্ত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। ৭০টি দেশ ও ১৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান এরদোগান। ভূমিকম্পে ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে চাপা পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী, দমকলকর্মী, চিকিৎসাকর্মী, সামরিক ও বেসামরিক লোকজন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর জিন্দিরেসের আলী বাতেল বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্যের জন্য আর্তনাদ শোনা গেলেও তাদের বাঁচানোর মতো কেউ নেই।’ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় ইদলিবে আল-শিফা হাসপাতালে নিয়োজিত ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত চিকিৎসক শাজুল ইসলাম বলেন, সিরিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোয় আর তিল ধারণের ঠাঁই নেই। একজন চিকিৎসককে ৪০-৪৫ জন মুমূর্ষু রোগী সামাল দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যেসব রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি আমি তাদের ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাচ্ছি। আর আগে থেকে ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের সরিয়ে রাখছি। আমরা আক্ষরিক অর্থেই হাসপাতালের ফটকেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, কোন রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করব আর কোন রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করব না।’

তুরস্ক সিরিয়ায় কান্না আর্তনাদ

মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ভবন। তুরস্ক সিরিয়ায় ভূমিকম্পবিধ্বস্ত এলাকায় স্বজন হারানো মানুষের আহাজারি আর্তনাদ -এএফপি

কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিনিয়র ইমারজেন্সি অফিসার আদেলহেইদ মার্সশাঙ্গ বলেছেন, ‘ম্যাপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এ ভূমিকম্পে ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। যাদের মধ্যে ৫০ লাখের অবস্থা খুবই খারাপ।’

তুরস্কের ভূমিকম্প এত ভয়াবহ কেন? : ভূমিকম্প আঘাত হানার পর আরও বেশ কয়েকটি ‘আফটারশক’ বা ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে একটি কম্পন ছিল মূল ভূমিকম্পের মতোই শক্তিশালী। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর এর যে আফটারশক বা পরাঘাত তার মাত্রাও ছিল ৭ দশমিক ৫। সিএনএনের আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগকালীন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ চ্যাড মেয়ারস বলেন, ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আফটারশকটি নিজেই আরেকটি ভূমিকম্প। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনের প্রধান অধ্যাপক জোয়ানা ফাউর ওয়াকার বলেন, শুধু কম্পনের শক্তির কারণেই এত বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি। এ ঘটনাটি ঘটেছে ভোরের দিকে, যখন মানুষ ঘরের ভিতরে ঘুমাচ্ছিল।

সর্বশেষ খবর