রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিদ্দিকবাজারে আতঙ্ক কাটেনি, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ

আরও একজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

আতঙ্ক কাটেনি সিদ্দিকবাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের। ঘুরেফিরেই তাদের আলোচনায় আসছে কুইন স্যানিটারি মার্কেটের বিস্ফোরণ প্রসঙ্গ। ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের পর থেকে এর পার্শ্ববর্তী মার্কেটগুলোর দোকানপাট বন্ধ থাকলেও গতকাল থেকে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আতঙ্কের মধ্যেই গতকাল স্যানিটারি ব্যবসায়ীসহ অন্য ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। অন্যদিকে গতকালও ক্ষতিগ্রস্ত কুইন স্যানিটারি মার্কেটের কলামে স্টিলের পাইপ বসিয়েছে রাজউকের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান। ভবনটির বেজমেন্টে পানি জমায় মেশিন দিয়ে সেখান থেকে পানি বের করেছে ওয়াসা। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের একটি টিম সেখানে গিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের মধ্যে গতকাল আজম মৃধা (৩৬) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা ২৪-এ পৌঁছেছে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত দুটি ভবনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের মার্কেটের দোকানপাট খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। বিধ্বস্ত ভবনের বিপরীত পাশের দোকানগুলোও এতদিন    বন্ধ ছিল। তবে চিরচেনা এই সড়কে নেই স্যানিটারি সামগ্রী, পাইপ, ক্যাবল বোঝাই ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, পিকআপ ভ্যান। নেই মানুষের হইহুল্লোড়, মালামাল বোঝাই করা শ্রমিকদের হাঁকডাক। ব্যবসায়ীদের কেউ পত্রিকা পড়ছেন, কেউ ইউটিউব দেখে সময় কাটাচ্ছেন, কেউ কেউ জড়ো হয়ে চোখের সামনে ঘটা সেদিনের ভয়ংকর ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছেন। ওই এলাকার বেশির ভাগ দোকানই স্যানিটারি, পাইপ ও ক্যাবলের। ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতার আনাগোনা নেই বললেই চলে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির বিপরীত পাশের জনতা পাইপ লিমিটেডের মালিক আবু হানিফ বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর প্রায় ১ হাজার ৮০০টি স্যানিটারি দোকান বন্ধ ছিল। আজ (শনিবার) দোকানপাট খোলা হয়েছে। কিন্তু বেচাকেনা নেই।’ বাংলাদেশ পাইপ অ্যান্ড টিউবওয়েল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রবিউল হক বাদশার কাছে বিস্ফোরণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতিসহ অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন। বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিকদের) কত বলব। আর বলতে পারব না।’ এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি স্থিতিশীল রাখতে গতকালও স্টিলের পাইপ বসাচ্ছিল রাজউকের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান শহিদুল্লাহ অ্যান্ড নিউ অ্যাসোসিয়েশন। বেলা আড়াইটার দিকে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির নিচ তলায় ও বেজমেন্টে এমএস পাইপ বসাচ্ছেন। পাইপগুলো ক্ষতিগ্রস্ত কলামের সঙ্গে ঝালাই করে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজের তদারক করছেন এক কর্মকর্তা। জানতে চাইলে তিনি নাম বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলছিলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কলামে এমএস পাইপ লাগানোর কাজ চলছে। শুক্র ও শনিবার মিলে মোট ১৭টি পাইপ বসানো হয়েছে। তার মতে, এভাবে পাইপ বসিয়ে রেকটিফায়েড করে দিলে ভবনটি ভাঙা লাগবে না। চুড়িহাট্টার ঘটনায় তাদের প্রতিষ্ঠান এভাবে ভবনটি টেকসই করে দিয়েছে। এতে ভবনের আয়ু বাড়ে বলে মন্তব্য তার। পাশেই ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পাইপ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির বেজমেন্টে জমে থাকা পানি বের করে আনছে। সেখানে কর্মরত একজন শ্রমিক জানান, মূল সড়কের পাশে থাকা ওয়াসার লাইন ছিদ্র হয়ে ভবনটির বেজমেন্টে পানি জমে গেছে। সকালে ওয়াসার লোকজন এসে সেখান থেকে পানি বের করেছেন। ভবনটির বেজমেন্টে গতকালও অনুসন্ধান চালিয়েছে সিটিটিসি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। বেলা ১১টার দিকে সিটিটিসির উপপুলিশ কমিশনার মিশুক চাকমার নেতৃত্বে একটি টিম সেখানে যায়। এ ছাড়া সিদ্দিকবাজার, আলুবাজারের মূল সড়কে, অলিগলি শোক সংবাদের ব্যানারে ছেয়ে গেছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করে, আহতদের জন্য দোয়া চেয়ে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে ব্যানার টাঙিয়েছেন ওখানকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী-স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন ও বন্ধুমহল।

গতকালও একজনের মৃত্যু : চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া আজম মৃধা (৩৬) বাংলাদেশ স্যানিটারি নামক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান তিনি। সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক এস এম আইয়ুব হোসেন বলেন, আজম মৃধার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার গোসিংগা গ্রামের চা দোকানদার শাজাহান মৃধার ছেলে তিনি। রাজধানীর মগবাজারে মধুবাগ এলাকায় থাকতেন। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আজম মৃধা ছিলেন বড়। লাভা নামের প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৬ বছর বয়সী এক মেয়ে আছে তার। স্ত্রীর নাম রিয়া আক্তার। জানা গেছে, ওই ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে দুজন আইসিইউতে আছেন। তাদের মধ্যে একজন লাইফ সাপোর্টে। মো. মোস্তফা (৫০) ও কামাল শেখ (৪০) নামের দুজন চিকিৎসা নিয়ে এখান থেকে চলে যান। বাকি পাঁচজনের মধ্যে কারও কারও শ্বাসনালিও পুড়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত রয়েছে। কাচসহ ছিটকে আসা বিভিন্ন পদার্থে শরীরও কেটেছে। হাসপাতাল সূত্র বলছে, সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখনো ২১ জন চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর