মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বেশি স্মার্টনেস দেখালে কারাগারে পাঠাব

পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশে হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৈতরা গ্রামের মো. রুবেল (২২) হত্যার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমানকে উদ্দেশ করে হাই কোর্ট বলেছেন, ‘আদালতে বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না। একদম কারাগারে পাঠিয়ে দেব।’ আদালতের তলবে গতকাল ওই পুলিশ কর্মকর্তা হাজির হওয়ার পর বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাই কোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। পরে মাত্র ৪২ ঘণ্টার মধ্যে একটি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করায় পুলিশের এসআই মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করতে নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনা নতুনভাবে তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশ সুপারের নিচে নয়, এমন কর্মকর্তা দিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে মামলাটির পুনর্তদন্ত করতে বলা হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পি। পরে আইনজীবী বলেন, ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন ও আদালতের সামনে ভুল তথ্য উপস্থাপনের জন্য হাই কোর্ট এসআই মাসুদুর রহমানকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল শুনানির শুরুতে হত্যা মামলা ৪২ ঘণ্টায় অবিশ্বাস্য তদন্ত প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার মতো পুলিশ কর্মকর্তা দরকার। আপনি মাত্র ৪২ ঘণ্টায় হত্যা মামলা তদন্ত শেষ করলেন! এই সময়ের মধ্যে কখন সাক্ষ্য নিলেন, কখন ঘুমালেন, কখন খাওয়া-দাওয়া করলেন তা আমাদের দেখান। আর কতটি মামলা আপনি তদন্ত করেছেন, সেগুলো কত সময়ে শেষ করেছেন তার তালিকা দেন। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, এটা আমার প্রথম তদন্ত। এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, ‘চার্জশিট দ্রুত দিলেও সমস্যা। আবার দেরি করে দিলেও সমস্যা।’ আদালত বলেন, তাহলে আমরা একটা মক ট্রায়াল করি। কত দ্রুত চার্জশিট দিতে পারেন, তা আমরা দেখতে চাই। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সেটা দেখার এখতিয়ার আপনাদের আছে। একপর্যায়ে আদালত দাখিল করা নথিতে দেখতে পান মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার মামলার একটি তদন্ত প্রতিবেদন রেফারেন্স হিসেবে নথিতে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।’ এ সময় আদালত পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে ভর্ৎসনা করে বলেন, কেন আপনি এটা দিলেন? আপনার কাছে তো রেফারেন্স চাওয়া হয়নি। বেশি স্মার্টনেস দেখাচ্ছেন। নিজেকে বেশি স্মার্ট মনে করেন? কোর্টের সঙ্গে বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না। একেবারে কারাগারে পাঠিয়ে দেব। উল্লেখ্য, ‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে ২ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ওই মামলার নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে আসামি সোহেল ওরফে নুরুন্নবী ও বাদী চম্পা আক্তার ওরফে অঞ্জনা ৫ মার্চ হাই কোর্টে আবেদন করেন। সোহেল ও চম্পা সম্পর্কে ভাই-বোন। আর রুবেল নামে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তি সোহেলের ভগ্নিপতি। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৪ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার এসআই মাসুদুর রহমানকে কেস ডকেটসহ ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। সে অনুসারে তদন্ত কর্মকর্তা গতকাল হাই কোর্টে হাজির হন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আদালত আদেশ দেন।

সর্বশেষ খবর