শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

শাওয়ালের ছয় রোজা ফজিলত, তাৎপর্য ও মাসায়েল

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

শাওয়ালের ছয় রোজা ফজিলত, তাৎপর্য ও মাসায়েল

শেষ হতে চলেছে ২০২৩ সালের পবিত্র রমজান মাস। পরের মাস শাওয়াল। প্রথম তারিখে পবিত্র ঈদুল ফিতর। দ্বিতীয় তারিখ থেকে শাওয়ালের শেষ পর্যন্ত অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল রোজা আছে; যা আমাদের মাঝে শাওয়ালের ছয় রোজা নামে পরিচিত। শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত ও তাৎপর্য : শাওয়ালের ছয় রোজা পালনে এক বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।

এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (পূর্ণ) রমজান মাস রোজা রাখবে এরপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখবে সে যেন পূর্ণ বছর রোজা রাখল।’ (মুসলিম : ১১৬৪) এ হাদিসের ব্যাখ্যা আমরা এভাবে বুঝতে পারি যে, যেহেতু সওয়াব লেখা হয় ন্যূনতম ১০ গুণ বৃদ্ধি করে, সেহেতু রমজান মাসে পূর্ণ ৩০টি রোজা রাখলে ১০ মাস রোজা রাখার সওয়াব লেখা হবে। এরপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখলে ৬০টি অর্থাৎ দুই মাস রোজা রাখার সওয়াব লেখা হবে। এভাবে রমজানের ৩০টি রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে (১০ মাস + দুই মাস = ১২ মাস) পূর্ণ বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার ১০ গুণ পাবে এবং যে একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুত তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সুরা আনয়াম : ১৬০)

হাদিসে হজরত নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন পরিপূর্ণরূপে দীন ইসলামের ওপর অটল থাকে, তখন সে যেসব নেক আমল করে সেগুলোর প্রতিটির বিনিময়ে তার আমলনামায় ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে সওয়াব লেখা হয়। আর সে যেসব মন্দ কাজ করে, তার প্রতিটির বিনিময়ে শুধু তার কাজের সমপরিমাণ পাপ লেখা হয়।’ (বোখারি : ৪২) তবে পূর্ণ বছরের সওয়াব লাভের জন্য শর্ত হলো, দীন ও ইমানের ওপর পরিপূর্ণরূপে অটল-অবিচল থাকা। (বোখারি : ৪২) ইবাদত ও সাহায্য আল্লাহর কাছেই চাওয়া। কারণ ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে। সুরাতুল ফাতেহার মধ্যে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকি। ‘ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাইনু’। ওগো আল্লাহ! আমরা ইবাদত আপনার জন্যই করি এবং আপনার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। দীন ও ইমানের ওপর তারাই অটল-অবিচল থাকতে পারে যারা জীবনের সব ক্ষেত্রে শরিয়তের নিয়মকানুন মেনে চলে। সব ধরনের হারাম থেকে বিরত থাকে, জীবনের প্রতিটি কাজে কোরআন-সুন্নাহকে মেনে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কখনো যেন সুন্নত বা মুস্তাহাব আমলও বাদ না যায় সেদিকে পূর্ণ খেয়াল রাখে। কোনো একজন বুজুর্গ বলেছেন, বর্তমান জমানায় যে ব্যক্তি ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদাগুলো যথানিয়মে আদায় করার পর নফল ও মুস্তাহাবও বাদ দেয় না সে আল্লাহর রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের পূর্ণ আশা করতে পারে।

ছয় রোজার মাসালা : শাওয়ালের ছয় রোজার সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকটি জরুরি মাসালা জেনে নিই। ১. শাওয়ালের প্রথম তারিখ অর্থাৎ শাওয়ালের প্রথম তারিখে আমরা ঈদুল ফিতর আদায় করি, এদিন রোজা রাখা হারাম। বছরে পাঁচ দিন রোজা রাখা হারাম- ১. ঈদুল ফিতরের দিন ২. ঈদুল আজহার দিন ও পরের তিন দিন। মোট পাঁচ দিন। ২. শাওয়ালের ছয় রোজা ঈদের পরদিন থেকেও রাখা যায়। আবার বিলম্ব করে শাওয়ালের যে কোনো দিন রাখা যায়। তবে রোজাগুলো রাখতে হবে শাওয়ালের মধ্যেই। ৩. শাওয়ালের ছয় রোজা একাধারেও রাখা জায়েজ আবার নিজের সুবিধামতো বিরতি দিয়েও রাখা জায়েজ। ৪. শাওয়ালের ছয় রোজা নফল বা মুস্তাহাব এ ইয়াকিন ও বিশ্বাস নিয়ে নফলের নিয়তে রাখা। রমজানের কাজা রোজা, বিশেষ করে অনেক মা-বোন ভাঙতি রোজা থাকেন এ ক্ষেত্রে তারা কি দুই রোজা একসঙ্গে রাখতে পারবেন?

এ সম্পর্কে আলেম-ওলামাদের বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। তবে রমজানের কাজা রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা পৃথক পৃথক রাখা ভালো। হাদিসে শাওয়ালের ফজিলত বলতে গিয়ে নবী করিম (সা.) রমজানের রোজা রাখা এবং শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার মাঝে আরবিতে ‘সুম্মা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়টি আলেম-ওলামারা ভালোভাবে জানেন যে, আরবি ব্যাকরণে এ সুম্মার নাম হরফুল আতফ। আর ব্যাকরণের নিয়ম হলো, হরফুল আতফের আগের জিনিস ও পরের জিনিস পৃথক পৃথক হবে। এ থেকে বোঝা যায়, রমজানের কাজা রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা পৃথক পৃথক রাখা উত্তম। এ ছাড়া হাদিসবিশারদগণ ওপরে এক বছর রোখা রাখার যে ব্যাখ্যা ও হিসাব করেছেন তা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এ দুই রোজা আলাদা রাখা উত্তম। রমজানের কাজা রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা একই সময় এক নিয়তে রাখলে তো রোজার সংখ্যা কমে যায়। তখন কিন্তু এক বছরের হিসাব যা ওপরে আলোচনায় এসেছে তা ঠিক থাকে না। তাই এক বছরের পূর্ণ সওয়াব পাওয়ার জন্য শাওয়ালের ছয় রোজা পৃথক পৃথক রাখি। মহান রব্বুল আলামিন সব মুমিন মুসলমানদের সঠিক নিয়মে মাসালা মাসায়েল জেনে শাওয়ালের ছয় রোজার ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর