বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বিশ্বব্যাংকের (বাংলাদেশ) সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ছাত্র সমাজের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটা একটা নতুন স্বপ্নের দিকে এগোচ্ছে। সেটাকে বাস্তবায়ন করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমাদের এই ছাত্ররা খুবই পরিষ্কার করে বার্তা দিয়েছেন। আমি তাদের কথার মতোই বলি দুঃশাসন বা শাসনের নামে শোষণের বাংলাদেশ আমরা আর চাই না। অতীতের মতো ভন্ডামির কোনো গণতন্ত্র চাই না। গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈর ও পরিবারতন্ত্রের শাসনও আমরা চাই না। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল তিনি এ কথা বলেন। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সত্যিকার অর্থে উন্নত দেশকে বিট করার মতো দেশ চাই। তথাকথিত উন্নত দেশ আর চাপাবাজির গল্প নয়, বাস্তবে আমাদের দেশটাকে নতুন করে গড়ার সময় এসেছে। আমরা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পচা গলা রাজনীতির কারণে আমাদের প্রতিটা খাত বিকল হয়ে গেছে। অর্থ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন, বিচার, সংসদ কোনো খাতই দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত নয়। নির্বাচন কমিশনও পক্ষপাতদুষ্ট রোগে আক্রান্ত। এগুলোর কাঠামোগত মেরামত করতে হবে। সবখানে শুদ্ধি অভিযান করে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে ছাত্ররা যেমন বলেছে, এক দল চলে গেছে আরেক দল এসে একইভাবে লুটপাট করবে সেটা করতে দেওয়া হবে না। এসব সমূলে উৎপাদন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আর্থিক খাতকে খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভিতরে স্বেচ্ছাচারিতা ঢুকে রাজনৈতিক যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সেগুলোও বন্ধ করতে হবে। এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের দেশ সরকারশূন্যতায় ভুগছে। আর মোটেও দেরি করা উচিত হবে না। যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পুনর্গঠনের কাজে নেমে যেতে হবে। কোনো বহিঃশক্তি যেন সুযোগ নিয়ে আমাদের ক্ষতি করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে খাই খাই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে পরিশুদ্ধভাবে রাজনীতি করতে হবে। এবারের ছাত্রজনতার অভ্যত্থান থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে যে, কোনোরকম স্বেচ্ছাচারিতা এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। যে সরকারই আসুক তাদেরকে এটা মাথায় রেখেই দেশ পরিচালনা করতে হবে। সামাজিকভাবে ন্যায়বিচারভিত্তিক বৈষম্যহীন সুশাসনের বাংলাদেশ গড়তে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সবার আগে নিজেদের পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে হবে। একইভাবে প্রত্যেক মানুষেরই উচিত হবে অনিয়ম-দুর্নীতি কিংবা স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। যেখানেই অন্যায় হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অতীতে যেমন গণতন্ত্রের নামে সাধারণ মানুষকে শোষণ করা হয়েছে সেটার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেদিকে আমাদের প্রতিটি নাগরিকের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।