বাংলাদেশের বাজারে হঠাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিজেলের বিক্রি কমে গিয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে ডিজেলের বিক্রি কমেছে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন। জ্বালানি তেল ব্যবহারকারীরা বলছেন, দেশে যানবাহন, সেচকাজ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং শিল্প-কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যেখানে ডিজেল ব্যবহার
বৃদ্ধি পাওয়ার কথা সেখানে হঠাৎ করে লাখ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল বিক্রি কমে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের। এই ঘটনায় কিছুটা চিন্তিত বিপিসি কর্তৃপক্ষ। তবে ডিজেল বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি এই সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন।
বিপিসি কর্তৃপক্ষ জানান, ডিজেলের ব্যবহার হঠাৎ কমে যাওয়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বা গবেষণা নেই। এক বছর ডিজেলের ব্যবহার কমেছে এ জন্য বিপিসি যে আগামী বছরে এই জ্বালানির আমদানি কমিয়ে দেবে- এমন না। তেল আমদানির ক্ষেত্রে বিপিসি যে চুক্তি করে সেখানে কিছু ফেক্সিবল লিমিট থাকে। সেখানে বিপিসি আমদানির ক্ষেত্রে কমবেশি করতে পারে। সাধারণত এই চুক্তিগুলো ছয় মাসের জন্য করা হয়। মূলত বাজার চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই ডিজেল আমদানি করা হয়। বিপিসি ৪৫ দিনের জন্য তেল মজুদ রাখে। এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো যদি ডিজেলের মজুত বেড়ে যায় এবং বিক্রি কমে যায় সেক্ষেত্রে হয়তো আসছে দিনে ডিজেলের আমদানি কমিয়ে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)-এর পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশে বিভিন্ন জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল বিক্রি হয় ৪২ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৭ মেট্রিক টন। কিন্তু এর আগের অর্থবছরে ডিজেল বিক্রি হয় ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক বছরে দেশে ডিজেল বিক্রি কমেছে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন (৬ লাখ ৯০ হাজার ৯৫৬ টন)। শতাংশের হিসেবে এটি ১৪ শতাংশ কম। বিপিসির বিগত পাঁচ বছরের জ্বালানি তেল বিক্রির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরেও ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ডিজেল বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ সে বছরও সর্বশেষ অর্থবছর থেকে ৬ লাখ ৬ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন বেশি ডিজেল বিক্রি হয়েছিল। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরেও ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন ডিজেল বিক্রি হয়। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন বেশি ছিল।
জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্পকারখানা, যানবাহন ও সেচকাজসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিবছরই জ্বালানি হিসেবে ডিজেলের চাহিদা ও বিক্রি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে ১৪ শতাংশ ডিজেল বিক্রি কমে যাওয়ায় কিছুটা চিন্তায় পড়েছেন বিপিসি কর্তৃপক্ষ। জ্বালানি তেল ব্যবহারকারীরা বলেন, কৃষি উৎপাদন কাজে বিশেষ করে সেচকাজে, যানবাহনে, শিল্পকারখানায় উৎপাদনে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ডিজেল ব্যবহার করা হয়। আর সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ও সেচ কাজে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে হিসেবে হঠাৎ করে লাখ লাখ মেট্রিক টন ডিজেলের বিক্রি কমে যাওয়ার কথা না। বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ধারণা করছি দেশে ডিজেলচালিত বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল। সেগুলো এখন উৎপাদনে নেই। আবার প্রচুর যানবাহনেও ডিজেলের ব্যবহার কমেছে। অনেক যান আবার এখন বৈদ্যুতিক চার্জে চলাচল করছে। এখানে ডিজেলের ব্যবহার অনেকটা কমেছে। সেচকাজে জ্বালানি হিসেবে ডিজেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। কিন্তু এখন সেচকাজেও বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে।