নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আজ দুই মাস ১৮ দিন। এরই মধ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ মাঠে সক্রিয় অন্য দলগুলো নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে। দলগুলোর শীর্ষনেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে রোডম্যাপ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না পাওয়ায় দলগুলো এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে একটি রোডম্যাপ চান দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা।
গত ১২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি। অন্তর্বর্তী সরকারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপ দিতে হবে। নইলে আন্দোলনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। যত দ্রুত নির্বাচন, ততই দেশের কল্যাণ। একই দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেওয়া দুটি রোডম্যাপের মধ্যে একটি সংস্কারের এবং আরেকটি নির্বাচনের। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ দৃষ্টি থেকে দেশকে ভালো জায়গায় নিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে এটাও আমরা আশা করছি, এ সময়টা নাতিদীর্ঘ হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই বলেন, একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ভাগ্যাহত জনতার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। স্বাধীনতা অর্থবহ হবে না। রাষ্ট্র সংস্কার করে গ্রহণযোগ্য সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু ঘুরেফিরে দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় আনলে জনগণের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত থাকবে না। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীর প্রধানের বক্তব্যে দেশবাসী আশ্বস্ত হবে, কিন্তু নির্বাচনের জন্য সময়টা কী হবে, তা সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ জরুরি। তিনি বলেন, সরকারের প্রধান ম্যান্ডেট গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বৈঠক করেছেন তারা বলছেন, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। রোডম্যাপ ঘোষণা করলে নির্বাচন নিয়ে সব বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। সরকারকে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। এখন থেকেই প্রক্রিয়া শুরু করলে নির্বাচন আয়োজন করতে বেশি দিন সময় লাগবে না বলেও মত তাদের। তারা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা সহযোগিতা করছেন, আগামীতেও করবেন। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ার শঙ্কা থাকছেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে হলে যত দ্রুত সম্ভব জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। দলগুলোর নেতারা বলছেন, ১৮ মাস সময় বলতে সংস্কার করতে ১৮ মাস নাকি নির্বাচন আয়োজন করতে ১৮ মাস লাগবে-এগুলো স্পষ্ট করতে হবে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার তা করতে হবে। এজন্য আমরা যৌক্তিক সময়ের কথা বলছি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সব ঠিক করতে হবে, পরামর্শ নিতে হবে। জানা গেছে, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশই দলই ৩০০ আসন টার্গেট করে সারা দেশে দল চাঙা করছে। দেশের সাধারণ মানুষও মেতে উঠতে চায় নির্বাচনি উৎসবে। তবে তারা এটাও বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে বিগত তিনটি ভোট আয়োজন করে পুরো নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এ কাজে সহযোগী হিসেবে পাশে ছিল নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। ফলে সরকার পতনের পর নির্বাচনব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে।