বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা ‘উচিত হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির আহমেদ রিজভী। সকালে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অবশ্য পরে এক বিবৃতির মাধ্যমে তার এ বক্তব্যের সংশোধনী দিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের জন্য আমি দুঃখিত’
রিজভী আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘সরকারের একজন উপদেষ্টা মাহফুজ সাহেব (মাহফুজ আলম) জানিয়েছেন যে, বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে। দেখুন, এটা করেছেন ঠিক আছে, কিন্তু সময় তো সবসময় এক রকম যায় না। যার যতটুকু ইতিহাসে অবস্থান আছে- সেটা থাক। আমি মনে করি, তার (শেখ মুজিবুর রহমান) ছবিটা নামিয়ে ফেলাটা উচিত হয়নি।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘খন্দকার মোশতাক ছবি নামিয়েছিলেন, জিয়াউর রহমান তুলেছিলেন। আমাদের জাতীয় জীবনে, জাতির ইতিহাসে যার যতটুকু অবদান- সেটা স্বীকার করা হোক। আমরা (বিএনপি) আওয়ামী লীগের মতো সংকীর্ণ নই। আমরা ছোট মনে পরিচয় দেব না। এ জন্য বলছি, শেখ মুজিবের ছবি নামানোটা উচিত হয়নি।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘খন্দকার মোশতাক আহমেদ বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামিয়ে দিয়েছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরে সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতার পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হলেন। শহীদ জিয়াউর রহমান কিন্তু শেখ মুজিবের ছবি বঙ্গভবনে পুনঃস্থাপন করলেন। আমরা স্বাধীনতার পরে শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক অন্যায়, অনেক দুঃশাসন দেখেছি- তার পরেও ছবিটা ছিল।’
রিজভী আহমেদ আরও বলেন, ‘দেশের চিকিৎসা অঙ্গনে ভালো ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার শাসনামলে বিভাজন করা হয়েছিল। বিএনপির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি অনেককে। বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের। আজকে যারা সচিব-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তাদের আন্দোলনে কোনো অবদান নেই। তারা গণতন্ত্রের জন্য মিছিলও করেননি, বরং ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। ড্যাবের কোনো ডাক্তার ন্যায্য কথা বলতে গেলে তারা বিরক্ত বোধ করেন। আপনারা কজন আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন? আর আজকে অহংকার করেন, কথা বলতে চান না। আমরা আপনাদের চিনে রাখছি।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ ড্যাবের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যের সংশোধনী : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বিবৃতির মাধ্যমে তার বক্তব্যের সংশোধনীতে বলেন, আজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে মর্মে একটি সংবাদের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। আমি মনে করেছিলাম, বঙ্গভবনের দরবার কক্ষে যেখানে সব রাষ্ট্রপতির ছবি থাকে সেখান থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে। মূলত ছবিটি সরানো হয়েছিল বঙ্গভবনের অন্য একটি অফিস কক্ষ থেকে।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে শেখ মুজিবের ছবি রাখার বাধ্যতামূলক আইন করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আইনের কোনো কার্যকারিতা থাকতে পারে না। অফিস-আদালত সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের জন্য আমি দুঃখিত।’