দুর্নীতি দমনে সব সেবামূলক খাত স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেশনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। কমিশন বলছে, বেসরকারি খাতে ঘুষ লেনদেন এখন পর্যন্ত অবৈধ নয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের আওতায় সরকারি খাতের মতো বেসরকারি খাতেও ঘুষ লেনদেন অবৈধ, কিন্তু সেটা এখনো কার্যকর হয়নি।
এটি ছাড়াও ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ লেনদেনকে অবৈধ ঘোষণা এবং আইনে কালো টাকা সাদা করার বৈধতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করাসহ ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ১৫ জানুয়ারি জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করে কমিশন। গতকাল পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দুদককে শক্তিশালী, কার্যকর ও ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কমিশনারদের পদ বাড়ানো, নিয়োগ, সার্চ কমিটি, আইনের সংস্কার, বেতন বৃদ্ধি ও প্রণোদনার জন্য সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন। ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে এ সংস্কার কমিশন গত বছরের ৩ অক্টোবর তার কার্যক্রম শুরু করে।
সংস্কার কমিশন বলছে, দেশে জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কোনো কৌশল নেই। দুর্নীতি দমন শুধু দুদকের একার কাজ নয়, এখানে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় অনেক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। যেমন- সংসদ, আইন ও বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন কমিশন, ব্যবসা খাত ও রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের দুর্নীতিবিরোধী ভূমিকা থাকতে হবে। যে জাতীয় কৌশল প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে, তাতে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নির্ধারণ করা থাকবে; যার মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটি নিয়মিতভাবে নজরদারি করতে হবে।
সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় অর্থ পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সংস্কার কমিশন। কমিশন বলছে, যে ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ ও বন্ধুত্বের বলয় থেকে সিদ্ধান্ত নেন। এটা বন্ধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন আইন দরকার।
বেনামি প্রতিষ্ঠান গড়ে এস আলম কয়েকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বেনামি কোম্পানির তথ্য প্রকাশ করা হয় না উল্লেখ করে সংস্কার কমিশন বলেছে, তারা মনে করে, বেনামি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে দেশের মানুষ জানে না। এমনকি অনেক সময় কর্তৃপক্ষের জানার সুযোগ থাকে না। তাই বেনামি প্রতিষ্ঠানের মালিকানার তথ্য একটা জাতীয় রেজিস্ট্রারে উল্লেখ থাকা উচিত। সেটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
রাজনীতি ও নির্বাচনসংক্রান্ত অর্থায়নে স্বচ্ছতার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে কমিশন। তারা বলছে, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি আয়-ব্যয় নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। হলফনামার তথ্য প্রকাশ করতে হবে। যদি হলফনামায় পর্যাপ্ত তথ্য না থাকে, তথ্য গোপন করা হয় ও বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ থাকে, তবে তার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
দুদককে শক্তিশালী করতে কয়েকটি আইন সংস্কারের কথা বলেছে কমিশন। দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন এর একটি। যে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেন, তার সুরক্ষায় আইন করতে হবে। একটা তথ্য প্রকাশ সুরক্ষা আইন রয়েছে, তবে সেটির কোনো প্রয়োগ ও কার্যকর প্রচার নেই। এ আইন যথেষ্ট নয়। তাই আইনটি সংশোধন করে কার্যকর ও প্রচার করার সুপারিশ করা হয়েছে।