বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্কারোপ ইস্যুর সমাধান শুধু আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব নয়। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেছেন, আমরা যৌক্তিক শুল্কারোপের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী সপ্তাহে দেশটির বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআরের সঙ্গে তৃতীয় দফায় আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। তবে শুধুই আলোচনা নয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের চেয়ে আন্তঃআঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে একটি চুক্তিও হয়েছে। শুল্ক কমাতে হলে আরও একাধিক নন ডিসক্লোজার চুক্তি চায় ট্রাম্প প্রশাসন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার এতে সম্মত না হলে শুল্ক আরও বাড়তে পারে। অতিরিক্ত চাপ ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে রপ্তানি টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ইতোমধ্যে সতর্ক সংকেতও দেওয়া হয়েছে। সোমবার বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব বিষয়ে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর ব্যবসায়ীদের সামনে রেখে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন শেখ বশির উদ্দীন; যা ছিল শুধুই নিয়ম রক্ষায়। ওই ব্রিফিংয়ে তিনি ওয়াশিংটনে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি। আলোচনার অগ্রগতি কী, ওয়াশিংটন বা ইউএসটিআর কী ধরনের শর্ত দিয়েছে; কিংবা আন্তঃআঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এ-সংক্রান্ত সব প্রশ্নই তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ ওইসব ইস্যু নিয়েই ইউএসটিআরের সঙ্গে দর কষাকষি হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষে আসার মতো নমনীয় ভাব দেশটি এখনো দেখায়নি।
এসব বিষয় ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের অবহিত করেছেন শেখ বশির উদ্দীন। তবে আন্তঃআঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু বলতে যুক্তরাষ্ট্র কী বোঝাতে চাচ্ছে? এর অধীনে কী কী বিষয় প্রাধান্য পেতে পারে। ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে কী বিষয়বস্তু যুক্ত হতে পারে, সেসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদেরও বলা হয়নি। এ ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বাণিজ্যের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র একটি বা একাধিক ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি চাচ্ছে, যার মধ্যে নিরাপত্তা ইস্যুও থাকবে। এ অঞ্চলে বাণিজ্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক কিংবা অন্যান্য আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিশ্চিত করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ যেন তার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির (আইপিএস) পক্ষে থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিস্তৃত কৌশল, যার লক্ষ্য হচ্ছে পুরো অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা। শুল্ক আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে চীনের বাড়তে থাকা ব্যবসা-বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দেশটি চায় বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উৎসাহিত না করুক।
আরও কিছু স্পর্শকাতর শর্তে বাংলাদেশ দরকষাকষি করছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশকে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বাংলাদেশকেও তা মেনে চলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকেও ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। যেসব মার্কিন পণ্যে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে, সেগুলো অন্য কোনো দেশকে না দেওয়ার শর্ত রয়েছে। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (অ্যামচেম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে কার্যকর আলোচনা দরকার। আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক বাধার চেয়ে অশুল্ক বাধাই বড়।’ এসব বিষয়ে নিষ্পত্তি করতে হলে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।