কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে গত বছর ২০ জুলাই সরকারের দেওয়া কারফিউ অমান্য করে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ দিনও বিচ্ছিন্ন ছিল দেশের ইন্টারনেট সংযোগ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন বাস্তবায়নে রাজধানীতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মিরপুর ১০ মেট্রোস্টেশন আর সেতু ভবনে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকা । সেনাবাহিনীর কারফিউ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেলায় জেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া নয় দফা দাবির আটটিই এদিন মেনে নেওয়া হবে বলে জানানো হয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পক্ষ থেকে। যে দাবিটি সরকার মেনে নিতে অস্বীকার করে সেটি ছিল, ছাত্র-জনতার হত্যার দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা। পুলিশ, ছাত্রলীগ আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে পুরো দেশ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুই পুলিশসহ এদিন অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তবে প্রকৃত সংখ্যা ছিল আরও বেশি। পুলিশের বিরুদ্ধে লাশ গুম করার অভিযোগ তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। সংঘর্ষের ফলে ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন।
বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীসহ সন্দেহভাজন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালায় পুলিশ। এদিন আটক করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা জেলা বিএনপির সম্পাদক নিপুণ রায়চৌধুরীকে।
২০ জুলাই উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরায় সারা দিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশ আর ছাত্রলীগের।
রাজধানীর উত্তরার আজমপুর রেলগেট, হাউস বিল্ডিং, ১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ারের সামন, ময়লার মোড় ও জয়নাল মার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীরা দিনের বিভিন্ন সময়ে জড়ো হন। আজমপুর রেলগেটে সকাল সাড়ে ৮টায় আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করেন। দুপুর ১২টায় হাইওয়ে পুলিশের একটি দল কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ দেওয়ান সিটি সংলগ্ন রেলগেটের দিকে এবং অন্যরা বিপরীত দিকে চলে যান। এরপর থেমে থেমে তারা দূর থেকে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে রেললাইনের ওপর অগ্নিসংযোগ করেন তারা। বিকাল সোয়া ৫টায় আজমপুর রেলগেটে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করছিলেন।
আজমপুর রেলগেটের এপাশ-ওপাশ মিলিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রেললাইনের ধারে আন্দোলনকারীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নেন। সন্ধ্যার পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলমের নেতৃত্বাধীন সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যরা সেখানে অভিযান শুরু করেন। এর আগে দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকে সবাইকে নিজ নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তবে তারা রেললাইন ছাড়ছিলেন না। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলতে থাকে মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও গুলিবর্ষণ। উত্তরা মূল সড়কের হাউস বিল্ডিংয়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে দেড় শতাধিক আন্দোলনকারী জড়ো হলে র্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। পরে তারা রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে অবস্থান নিলে এপিবিএন সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করেন। এ সময় কিছু পথচারীকে স্থানীয় সমবায় মার্কেটের দোকানের ভিতর লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার শব্দ থামলে তারা বেরিয়ে যার যার গন্তব্যে চলে যান।
উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে জমজম টাওয়ারের সামনে প্রায় ৬০০ আন্দোলনকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান।