ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে ক্যাম্পাস। এদিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে বাড়ছে উত্তেজনা। এখনো পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা দিতে পারেনি ছাত্রদল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র প্যানেল । ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন ছিল গতকাল। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে মোট ৬৫৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
সোমবার পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা দেয় ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী সংসদ’, ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’। তবে এদিন পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে না পারা ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে গতকাল পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাম সংগঠনগুলোর জোট। ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ নামে তারা পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে। অন্যদিকে বাম সংগঠনগুলোর আরেকটি অংশ প্যানেল ঘোষণা দেয়। ‘নাঈম-অনয়-অদিতি প্যানেল’ নামে ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (একাংশ) ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল সমর্থিত এ আংশিক প্যানেল ঘোষণা করা হয়।
এ প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচনে অংশ নেবেন ছাত্রলীগ-বিসিএল ঢাবি শাখার সভাপতি নাঈম হাসান হৃদয়, জিএস পদে ছাত্র ইউনিয়নের শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক এনামুল হাসান অনয় এবং এজিএস পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাবি শাখার সদস্যসচিব অদিতি ইসলাম। গতকাল পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেওয়ার কথা থাকলেও রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে থাকা স্বতন্ত্র প্যানেল, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মোহাম্মদ খালিদের নেতৃত্বে থাকা ‘ডিইউ ফার্স্ট’ নামের প্যানেল পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি। ডাকসুর মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় এক দিন বৃদ্ধির কারণে তারা প্যানেল ঘোষণা দিতে সময় নিচ্ছেন বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় এক দিন বাড়ানোয় প্রশাসন ছাত্রদলকে সুবিধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতারা।
উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন ছিল ১৮ আগস্ট। তবে তা গতকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে ছাত্রদলের এক নেত্রী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে তাঁকে বাধা দেন হলের একদল শিক্ষার্থী। ফলে মনোনয়নপত্র না নিয়েই চলে যেতে হয় ওই নেত্রীকে। এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় নিন্দা ও বিচারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা। এর কয়েক ঘণ্টা পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসে-‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহের জায়গা থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় এক দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ এ ছাড়া শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে ছাত্রদল নেত্রীকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনায় সোমবার রাত ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রশাসনের ওপর চাপপ্রয়োগের অভিযোগ আনেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে ছাত্রদল নেত্রী নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পর মনোনয়নপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেন। এতে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানান। এখানে সুস্পষ্ট আচরণবিধি ভঙ্গ হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, উল্টো জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ ‘মব’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে, যা সুস্পষ্টভাবে গণতান্ত্রিক অধিকারের হরণ।
এদিকে সোমবার সিনেট ভবনেও এক ছাত্রদল নেতার আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে তাঁরা অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, ‘মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধি উল্লেখ থাকলেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জসীমউদ্দীন হলের আহ্বায়ক তানভীর বারী হামিম মিছিল, স্লোগানসহ প্রবেশ করেন; যা আচরণবিধি-২ (ক)-এর লঙ্ঘন এবং ১৭ (খ) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
ছাত্রদল প্যানেল দিতে না পারায় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় বাড়ানো হয়েছে মন্তব্য করে সংগঠনটির ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রদল যথাসময়ে প্যানেল গঠন করতে পারেনি দেখে প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য এক দিন সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি প্রশাসনের ওপর এরূপ চাপ প্রয়োগ করে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলেও প্রভাব ফেলা হবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুলিয়াস সিজারকে শিক্ষার্থীনিপীড়ক আখ্যা দিয়ে তাঁর ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ঢাবি সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম রানা জয় ও সালাউদ্দিন আম্মার নিলয়। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের দোসর আখ্যা দিয়ে ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
’৭১বিরোধী অপশক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে জগন্নাথ হলে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রভোস্ট অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন হলটির একদল শিক্ষার্থী। যদিও জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী সর্বমিত্র চাকমা শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।