আমাদের দেশে বিয়ের কনের নাকে লম্বা নোলক অনেক পুরনো ঐতিহ্য। আর বিবাহিত রমণীর নাকে নোলকের বদলে ছোট্ট পাথরের ফুল সেটাও ঐতিহ্যের অংশ। আবার কেবল বিবাহিতরাই নয়, নারীদের সাজে নাকফুল যেন হয়ে উঠেছে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে ছোট ফুল ছাপিয়ে ইদানীংকালে আবার ফিরে এসেছে টানা দেওয়া নথের সেই পুরনো স্টাইল। আকৃতি, নকশা বা রং বদলে নাকফুল ঠিকই নিজের পুরনো আসনে অধিষ্ঠিত। সে স্টাইলের আদ্যোপান্ত নিয়েই এবারের শেষ প্রচ্ছদ।
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের তরুণ-তরুণী এমনকি নারীদের মধ্যে বড় নাকফুল বা নথের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। উৎসবে-পার্বণে সাজগোজের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে এই নাকফুল। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া তরুণী, কর্মজীবী ও সদ্য বিবাহিতদের মধ্যে বড় নাকফুলের জনপ্রিয়তা বেশি। এগুলোর ডিজাইনে রয়েছে জয়পুরি কাজ, ফুল, পাতা ও তারার আকৃতি এবং নকশা। জ্যামিতিক ধাঁচের মধ্যে রয়েছে গোল, তিনকোনা কিংবা রেখার বিভিন্ন আকৃতি। নকশায় বৈচিত্র্যের পাশাপাশি কিছু নাকফুলে রং ও পাথরের কারুকাজও চোখে পড়ে। একটা সময় ছিল যখন নাক না ফুঁড়িয়ে নাকফুল পরিধানের কথা ভাবাই যেত না। এখন সেই দিন ফুরিয়েছে। নাক না ফোঁড়ানো না থাকলেও পরা যাবে নাকফুল। বিশেষভাবে তৈরি এই ফুলগুলো তরুণীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
নাক ফোঁড়ানো ও যত্ন
নাকফুল পরতে চাইলে নাক ফোঁড়ানো ভালো। তবে অনেকেই না ফুঁড়িয়েও টিপ নাকফুল পরেন। পাথরের টিপও ব্যবহার করেন অনেকে। নাক ফোঁড়ানোর জন্য ভালো কোনো বিউটি পার্লারে যেতে পারেন। নাক ফোঁড়ানোর পর প্রথমে সোনার নাকফুল পরলে সংক্রমণের ভয় থাকে না। ক্ষত শুকিয়ে গেলে পছন্দমতো যে কোনো নাকফুল পরতে পারেন। নাক ফোঁড়াতে খরচ হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা।
কতরকম নাকফুল
এখন সোনার পাশাপাশি রকমারি উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে নাকফুলে। রুপা, মুক্তা, হীরা ও বিভিন্ন পাথরের সংমিশ্রণে নাকফুল হয়ে যাচ্ছে বাহারি। সাদা পাথরের নাকফুলের আবেদন চিরন্তন। এখন বেশি চলছে হীরের নাকফুল। নকশায় রয়েছে বৈচিত্র্য। নাকফুলের ওপর গোলাকার, চৌকোণা, তারা, ফুল ও ত্রিভুজ আকৃতির বিভিন্ন রঙের পাথর বসানো থাকে।
কেমন নাকফুল
মুখ ছোট হলে ছোট নাকফুল ভালো মানায়। আর লম্বা নাক ও বড় মুখের সঙ্গে বড় নাকফুল পরা ভালো। সব সময় ব্যবহারের জন্য নাকে এক পাথর বা হীরার ছোট নাকফুল ব্যবহার করতে পারেন। অল্পবয়সীরা চাপা নথও ব্যবহার করতে পারে। অনুষ্ঠানে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে একটু জমকালো বড় নাকফুলও পরা যায়। যাদের নাক খাড়া ও লম্বা তারা বড়, ছোট, একাধিক পাথরের নাকফুল পরতে পারেন। সব সময় ব্যবহারের জন্য এক পাথরের হীরার তৈরি ছোট নাকফুল সবচেয়ে উত্তম। অল্পবয়সীরা চাপা নথও ব্যবহার করতে পারে।
নথের ব্যবহার
নাকফুলের পাশাপাশি নথও এখন আলোচনায় আছে। গোলাকার, ত্রিকোণ বা চৌকো বিভিন্ন নকশার নথ এসেছে বাজারে। শুধু সোনা বা সোনার মধ্যে পাথর বসানো নথেই রয়েছে বেশ কয়েকটি নকশা। সাদা পাথরের নথ এখন বেশ ট্রেন্ডি।
কোথায় পাবেন
সোনা ও হীরের নাকফুল পাবেন ঢাকার বায়তুল মোকাররম, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, আড়ং বা যে কোনো গয়নার দোকানে। ইমিটেশন নাকফুল পাবেন ঢাকার নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেট, চকবাজার, চাঁদনী চক ও গাউছিয়ায়।
দরদাম
রুবি, পান্না, চুনি, নীলা, জিরকন প্রভৃতি পাথর বসানো সোনার নাকফুল পাবেন ৮০০-১৫০০ টাকায়। সোনার ওপর মুক্তা বসানো নাকফুল ৭০০-১৩০০ টাকা, শুধু সোনার নাকফুল ডিজাইন ও ওজনভেদে ৬০০-১৫০০ টাকা। বিভিন্ন ডিজাইনের হীরার নাকফুল হীরার আকৃতিভেদে ৪-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। রুপার নাকফুলের দাম কিছুটা কম। রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেওয়া নাকফুল পাবেন ২০০-৬০০ টাকায়। রুপার ওপর মুক্তা বসানো নাকফুল ৩০০-৮০০ টাকা। সোনার দোকান ছাড়াও বিভিন্ন শপিং মলের প্রসাধনীর দোকানে পাবেন ইমিটেশনের ওপর পাথরের ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির নাকফুল।
টিপস
>> যে কোনো পোশাকের সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে যায় নোজ রিং। বিশেষ অনুষ্ঠানে জমকালো শাড়ির সাজে, আবার পুজোর সময় সালোয়ার কামিজের সঙ্গেও ভালো মানাবে।
>> পরতে পারেন মাঝারি মাপের রঙিন নাকফুল। বেশ অনেক ঝুল রয়েছে এমন স্টোন বা পুঁতি দিয়ে তৈরি নাকের দুল ট্র্যাডিশনাল পোশাকের সঙ্গে দারুণ মানাবে।
>> একটু হটকে লুকস্ পেতে টানা নাকের দুল পরতে পারেন।
>> ছোট্ট একটা স্টোনের নাকফুল রূপে যোগ করবে স্পেশাল টাচ। ট্র্যাডিশনাল থেকে ক্যাজুয়াল, যে কোনো পোশাকের সঙ্গে পরতে পারেন এমন নাকছাবি।
>> বড় রং দেওয়া ঝোলা নাকের দুল। ট্র্যাডিশনাল পোশাকে নিজেকে গর্জিয়াস লুক দিতে এমন নাকের গয়না পরতে পারেন। এতে করে লুকটাই পাল্টে যাবে!