শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেশবতী কন্যা

কেশবতী কন্যা

♦ মডেল : অমৃতা খান ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ ♦ ছবি : নেওয়াজ রাহুল

লম্বা চুল কার না পছন্দ। নারীর রূপ-সৌন্দর্যের অন্যতম একটি বিষয়ও বলা যায় মোহনীয় একগোছা চুলকে। এই চুলের মুগ্ধতায় হারিয়ে যায় প্রেমিকহৃদয়। কেশবতী কন্যার সৌন্দর্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- তানিয়া তুষ্টি

 

রমণীর লম্বা চুলের মুগ্ধতা সব যুগেই। প্রেয়সীর একগোছা চুলের  সৌন্দর্যে কত যুবক যে মন হারিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। যুগে যুগে বহু প্রেমিক রচনা করে গেছেন- চুল নিয়ে গল্প, কবিতা, ছন্দ ও গান। কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায় এখনো প্রেমিক পুরুষটি তার প্রেয়সীকে শোনায়- ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর...

 

সুন্দর চুল শুধু আলাদা সৌন্দর্যই বহন করে না, যে কোনো নারীর চেহারায় সার্বিক প্রভাবও ফেলে। আর তাই মেয়েরা নিজের সৌন্দর্য বাড়াতে বহু যত্ন আত্তি করে চুল বড় করতে আগ্রহী হন। সময় ব্যয় করেন চুলচর্চায়। নানা উপকরণের ব্যবহার চলে তার সৌন্দর্য বাড়াতে। নিয়ম করে চুলে শ্যাম্পু করা, কন্ডিশনিং করা, হেয়ার ট্রিমিং, নিউট্রিশনিং আরও কত কী করেন চুলকে সুন্দর করতে। দেশি-বিদেশি মানসম্মত পণ্যটি খুঁজে বের করেন চুলের সুস্থতা ধরে রাখতে। এতসব প্রচেষ্টা সার্থক হয় সেই চুলের প্রশংসা পেয়ে। পুরুষহৃদয়ও কম যান না, নারীর চুলের প্রশংসায় রচনা করতে পারেন, ‘তোমার চুল বাঁধা দেখতে দেখতে ভাঙল কাচের আয়না’র মতো কালজয়ী গান। প্রিয় মানুষটিকে খুশি করতে এর চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র আর কী  হতে পারে।

 

কেশবতী কন্যার প্রেমে শুধু ভারতীয় উপমহাদেশের ছেলেরা পাগল নন, বিদেশিদের অনুভূতিও বেশ আবেগী। পাবলো নেরুদা কোনো এক লেখায় প্রিয়তমার চুলের বর্ণনায় লিখেছিলেন- তোমার চুলের বর্ণনায় কাটাতে পারি তামাম জীবন আঁকতে পারি এক একটির নিবিড় সুন্দরতা।

 

অন্য প্রেমিক অন্য চোখে দেখে নেয় ভালোবাসার মুখ, তোমার চুলের বিন্যাসে আমি পাই আমার মুগ্ধতা।

 

চীনের হুয়াংলু গ্রামের স্থানীয় ইয়াও গোষ্ঠীর কাছে তো নারীদের লম্বা কালো চুল একটি ঐতিহ্যের অংশ ও অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। বিশ্বের দীর্ঘতম চুলের গ্রাম হিসেবে গিনেস সার্টিফিকেটও মিলেছে তাদের। তারা বিশ্বাস করে, লম্বা চুল আয়ু, ধনসম্পদ ও সৌভাগ্যের প্রতীক।

 

আমাদের অঞ্চলে চুলকে এভাবে না ভাবা হলেও মর্যাদার সঙ্গে দেখা হয়। কোনো নারীর লম্বা চুল মানে তার প্রতি একটু বিশেষ দৃষ্টি। করপোরেট যুগে ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে অনেক মেয়েই চুল কেটে সুবিধাজনক দৈর্ঘ্যে রাখার পক্ষে। ঠিক অপরদিকে এ যুগেও বাজার ছেয়েছে চুল দ্রুত লম্বা ও কালো করার জন্য নানা ব্রান্ডের তেল, শ্যাম্পুসহ অনেক পণ্য। অর্থাৎ সময় বাঁচানো বা যতœআত্তির কষ্ট এড়াতে কেউ কেউ চুল খাটো রাখার পক্ষে থাকলেও অনেক মেয়ে চান তার চুল লম্বা হোক।

 

পুরনো একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের কথা এ যুগের ছেলেমেয়েদের কাছে এখনো প্রিয়। কোনো মেয়ের লম্বা চুলের প্রশংসায় দুষ্টুমির ছলে হলেও যেন একবার বলতে চায়, তোমার ঘন কালো চুলে হারিয়ে যায় মন। যে কোনো পোশাকের সঙ্গে লম্বা চুল মানানসই। বাঙালি মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি অথবা থ্রিপিসে এটি দারুণ মানিয়ে যায়। ওয়েস্টার্ন পোশাকেও চুলের সৌন্দর্য বজায় থাকে একই রূপে। লম্বা চুলের সবচেয়ে সুবিধা হলো, ইচ্ছামতো নকশা করে বাঁধা যায়। কেউ আবার চুল ছেড়ে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। হাতে সময় অল্প থাকলে একটি রাবারে পেঁচিয়ে বেরিয়ে গেলেও চলে।

 

লম্বা চুলের সৌন্দর্য চান অনেক মেয়েই। রেশম কোমল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়ার জন্য রইল কিছু টিপস-

 

- চুলে খুশকি থাকলে নিমপাতা পেস্ট করে এর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার চুলের গোড়ায় লাগিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ঘরে তৈরি এই প্যাক ব্যবহারে দ্রুত উপকার পাবেন।

- চুল যদি নিস্তেজ ও প্রাণহীন হয়ে থাকে তবে পাকা পেঁপে ব্লেন্ড করে নিন। এর সঙ্গে আধা কাপ টক দই মিশিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টার জন্য। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

- যাদের অনেক বেশি চুল পড়ে আর খুশকি সমস্যা আছে তাদের জন্য মেথি খুব উপকারী। সারা রাত মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ভেজানো মেথি ভালো করে পেস্ট করে চুলে আধা ঘণ্টার জন্য লাগিয়ে রাখতে হবে। চুল ধোয়ার পর পরিবর্তনটা নিজেই টের পাবেন।

- আপনাকে যদি ভ্রমণ অথবা ধুলোময় রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয় অবশ্যই চুল ভালোভাবে বেঁধে নেবেন। এমনকি স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারলে আরও ভালো হয়। এতে চুল সুরক্ষিত থাকে। ধুলো-ময়লায় চুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

- মাসে অন্তত একবার চুলের আগা ট্রিম করুন। আগা বেশি রুক্ষ হলে বা ফেটে গেলে চুলের আগা কেটে ফেলুন।

- যতই তাড়া থাকুক হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।  হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারে দ্রুত চুল ড্যামেজ হয়।

 

মূলত সুন্দর চুল পেতে বছরজুড়েই যত্ন নিতে হয়। তবে বর্ষাকালে এটি বাধ্যতামূলক। কারণ বর্ষার আবহাওয়া ঠাণ্ডা ও গরম। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে। মাথার ত্বকে জন্ম  নেয় ছত্রাক। ফলে ত্বক ও চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। এ জন্য স্বাভাবিক, তৈলাক্ত ও শুষ্ক- প্রত্যেক ধরনের চুলের যত্ন আলাদাভাবে করতে হবে। চুল পড়া, খুশকি, স্ক্যাল্পে ঘামাচির মতো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় বর্ষায়। তাই এ সময় চুলের ব্যাপারে অনেক যত্নবান হতে হবে।

 

যাদের চুল তৈলাক্ত, বৃষ্টির দিনে তাদের চুল আরও বেশি  তৈলাক্ত দেখায়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় চুল দেরি করে শুকায় বলে চুল নেতিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে শ্যাম্পু করার পর পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে দিলে চুলে বিশেষ উজ্জ্বলতা আসবে। লেবুর পরিবর্তে ভিনেগারও ব্যবহার করতে পারেন। চুলের ধরন  তৈলাক্ত হলে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন না। আর যাদের চুলের ধরন শুষ্ক, তারা শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দুটোই ব্যবহার করবেন। একটি উপকারী প্যাক হচ্ছে টক দই, মধু, পাকা পেঁপে বা পাকা কলা ভালোভাবে পেস্ট করে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এ প্যাকটি ২০ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। স্বাভাবিক ধরনের চুলের যত্নও নেওয়া সবচেয়ে সহজ। তবে মনে রাখতে হবে চুলের গোড়ায় যেন ময়লা জমে না থাকে। প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে হবে। তবে বেশি করে পানি দিয়ে শ্যাম্পু পরিষ্কার করতে হবে। কন্ডিশনারও একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হবে। যাদের চুলের ধরন শুষ্ক তাদের জন্য একটি উপকারী প্যাক হচ্ছে আমলা। এ প্যাক বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এ আমলা প্যাকের সঙ্গে টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে মাথায় লাগাতে হবে। এটা ১৫ মিনিট রেখে পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। আর এ প্যাকটি তৈলাক্ত এবং স্বাভাবিক চুলের জন্যও ভালো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর