বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার’। জানা যায়, বর্তমানে দেশের ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এদের ৭০ শতাংশের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে এই রোগীদের কিডনি, চোখের রোগ, হৃদরোগসহ আরও বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। এতে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ছে। দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের ৬১ শতাংশই জানেন না তারা এ রোগে ভুগছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। আক্রান্ত চারজনের তিনজনই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর ডায়াবেটিস শনাক্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর চিকিৎসকের কাছে আসায় অন্ধত্ব, কিডনি নষ্ট, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও মুখে ইনফেকশনের মতো জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে। এমন রোগীর বড় অংশই তরুণ।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি এবং জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডায়াবেটিস শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আক্রমণ করে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। এতে ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দৃষ্টিশক্তি কমে যায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে যৌন দুর্বলতা দেখা দেয়, কিডনি রোগ হয়, পায়ে পচনশীল ঘা হতে পারে। এই ঘায়ের কারণে পা কেটে ফেলায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় অনেক রোগীকে। ডায়াবেটিস রোগীরা হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘টাইপ-২ ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। তাই হাঁটতে হবে, মুটিয়ে যাওয়া যাবে না, কোমল পানীয়-ফাস্টফুড খাওয়া বন্ধ করতে হবে, দুশ্চিন্তা করা যাবে না। ডায়াবেটিস যাতে না হয় সেভাবে জীবনযাপন করতে হবে, আর যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসাব মতে, বিশ্বের মোট ডায়াবেটিক রোগীর ৮৭ শতাংশই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে বাস করছেন। বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। গর্ভাবস্থায় প্রথমবার ডায়াবেটিস ধরা পড়ার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, স্থূলতা, শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া এবং তামাক ব্যবহারের কারণে দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকায় হার্ট ও কিডনির রোগও বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘৭০ শতাংশের বেশি ডায়াবেটিক রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ডায়াবেটিক রোগীর ৮০ শতাংশ মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। ডায়াবেটিস না থাকলে কিডনি রোগী অনেক কমে যেত।’
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ