গ্রীষ্মকালে শরীরকে হাইড্রেটেড ও ঠান্ডা রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই সময় অতিরিক্ত ঘাম, পানিশূন্যতা এবং হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন কিছু স্বাস্থ্যকর পানীয় ও খাবার রাখা প্রয়োজন, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি পুষ্টিও জোগায়।
চলছে কাঁচা আমের মৌসুম। কাঁচা আম শুধু রসনা তৃপ্ত করার উপাদান নয়—এটি এক অনন্য স্বাস্থ্যকর ফল, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালের জন্য। প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ ও ঘরোয়া চিকিৎসায় কাঁচা আম ব্যবহার হয়ে আসছে নানা রোগ প্রতিরোধে ও শরীর সুস্থ রাখতে। কাঁচা আম খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে।
গরমের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা:
গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত তাপ শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। কাঁচা আম শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে সৃষ্ট হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে থাকা ‘টারটারিক অ্যাসিড’, ‘ম্যালিক অ্যাসিড’, ও ‘সাইট্রিক অ্যাসিড’ শরীরকে ক্ষারীয় রাখে, যা তাপজনিত ক্লান্তি ও পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।
হজমে সহায়ক:
কাঁচা আমে থাকা এনজাইম হজমে সাহায্য করে। এটি যকৃতের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং পিত্ত রস নির্গত হতে সাহায্য করে, যা চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। যারা অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য কাঁচা আম অনেক উপকারী।
লিভার ডিটক্সিফিকেশন:
কাঁচা আম যকৃতের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। এটি লিভারের এনজাইমগুলো সক্রিয় করে, ফলে টক্সিন পরিষ্কার হয়, এবং লিভার ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
রক্ত বিশুদ্ধ করে ও রক্তস্বল্পতা রোধ করে:
এতে থাকা আয়রন ও ভিটামিন ‘সি’ রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে কাঁচা আম অনেক কার্যকর।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী:
ভিটামিন ‘সি’, ‘এ’ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় কাঁচা আম ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
যদিও পাকা আমে চিনি বেশি থাকে, কাঁচা আমে তা কম থাকে। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করে, ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে:
কাঁচা আম চিবানোর সময় লালা নিঃসরণ বাড়ায়, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এটি মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, মুখের দুর্গন্ধ ও ইনফেকশন রোধে সহায়ক।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
কাঁচা আমে ক্যালরি কম কিন্তু ফাইবার বেশি। ফলে এটি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং অপ্রয়োজনীয় খাওয়া কমে যায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল থাকার কারণে কাঁচা আম শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
সাবধানতা:
• অতিরিক্ত কাঁচা আম খেলে গ্যাস, পেট ব্যাথা বা পেটের সমস্যা হতে পারে।
• খালি পেটে কাঁচা আম না খাওয়াই ভালো।
• যাদের টনসিল বা গলা ব্যথা হয়, তাদের জন্য কাঁচা আম সমস্যা করতে পারে।
লেখক: পুষ্টিবিদ, আলোক হাসপাতাল লি. মিরপুর, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২
বিডি প্রতিদিন/নাজিম