বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি লোক শ্বাসনালির সচরাচর সমস্যা-অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। তাদের ৯০% এরও বেশি অত্যাধুনিক চিকিত্সা পায় না এবং অনেক রোগী মারা যায়। যদিও এ মৃত্যুর ৯৯% প্রতিরোধ করা সম্ভব, যদি আধুনিক চিকিত্সা ও ডাক্তারের তদারকির মাধ্যমে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেওয়া যায়।
অ্যালার্জেন পরিহার : অ্যাজমা বা হাঁপানির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হলো, যে অ্যালার্জি থেকে শ্বাসকষ্ট হয় তা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা। তাই অ্যাজমা রোগীদের প্রথমেই অ্যালার্জি টেস্ট করে জানা দরকার কোন ধরনের অ্যালার্জি দিয়ে শ্বাসকষ্ট হয়।
ওষুধ প্রয়োগ : নানা ধরনের অ্যাজমার ওষুধ বাজারে আছে। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ ব্যবহার করে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন।অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি : অ্যালার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিনও অ্যাজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিত্সা পদ্ধতি। অ্যালার্জি ভ্যাকসিনের মূল উদ্দেশ্য হলো যে অ্যালারজেন দ্বারা অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যা হচ্ছে সেই অ্যালার্জেন স্বল্পমাত্রায় প্রয়োগ করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে ওই অ্যালার্জেন দ্বারা রোগী শ্বাসকষ্টে বা অ্যাজমাতে যেন আক্রান্ত না হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিত্সা দেওয়া হয়ে থাকে। যদিও প্রায় ৮০ বছর ধরে ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশে প্রচলিত এবং এক এক দেশে এক একভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল না, তাই ভ্যাকসিন বা অ্যালার্জেন ইমুনোথেরাপি ব্যবহারের দিক-নির্দেশনা তৈরির জন্য ১৯৯৭ সালে ২৭ থেকে ২৯ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাপী অ্যালার্জি, হাঁপানি ও ইমুনোথেরাপি সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা যথা আমেরিকান একাডেমি অব অ্যালার্জি, অ্যাজমা অ্যান্ড ইমুনোলোজি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি, জাপানিজ সোসাইটি অব এলারগোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটঅব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিস একত্রিত হয়ে অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে প্রতিষেধকমূল অ্যালার্জেন ইমুনোথেরাপি বা ভ্যাকসিনের ব্যবহারের দিক-নির্দেশনা তৈরি করেন। অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ও অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস এর ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন কার্যকরী বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
ইমুনোথেরাপি জন্য আপনি কি উপযুক্ত?
যেসব অ্যালার্জেন অ্যালার্জি রোগের কারণ তা নিরূপণ পরবর্তী সময়ে ইমুনোথেরাপির জন্য নির্ধারণ করা হয়। ইমুনোথেরাপি শুরুর আগে মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত রোগীদের পর্যাপ্ত ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার পরই ইমুনোথেরাপি শুরু করা সম্ভব।
লেখক : অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং চিফ কনসালটেন্ট,
অ্যাজমা ও অ্যালার্জি সেন্টার, ঢাকা।