রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঈদ ভ্রমণ ও স্বাস্থ্যের টুকিটাকি

ঈদ ভ্রমণ ও স্বাস্থ্যের টুকিটাকি

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। সবাই চায় এই সময়টাতে পরিবার পরিজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। ইতমধ্যে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে ঘরমুখো মানুষের ঢল। ঈদ ভ্রমণে স্বাস্থ্যঝুঁকির টুকিটাকি জানতে ডা. সজল আশফাকের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত লিখেছেন —শামছুল হক রাসেল

ঈদের সঙ্গে ভ্রমণ এবং ভোজনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বলা যায় ঈদের সঙ্গে ভ্রমণ এক অবিচ্ছেদ্য বিষয়। একইভাবে ঈদ মানে খাবারের সম্ভার। এই ভ্রমণে বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভ্রমণের সময় কেউ যাতে অসাবধানতাবশত আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, বাইরের খাবার খেয়ে ও পানি পান করে অসুস্থ হয়ে না পড়ে সে বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। তা না হলে পুরো ঈদের আনন্দ আগেভাগেই মাটি হয়ে যেতে পারে। ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় সঙ্গে নিতে হবে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ভ্রমণে জানালার পাশে অতিরিক্ত বাতাসের ঝাপটা থেকেও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ধরনের ছোটখাটো বিষয়ও মাথায় রাখা উচিত।

ঈদের ভ্রমণে অধিকাংশ লোকই

গ্রামের বাড়িতে যায়। যেখানে অনেক সাধারণ ওষুধও পাওয়া যায় না। তাই সম্ভাব্য অসুস্থতার কথা বিবেচনায় রেখে সাধারণ কিছু ওষুধপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়া খুবই বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন- মাথাব্যথা, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, পেটফাঁপা, বদহজম, এসিডিটির মতো সাধারণ সমস্যা এসময়ে হতেই পারে। এসবের জন্য প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, এসিডিটি বদহজমের এন্টাসিড, রেনিটিডিন জাতীয় ওষুধ, পেটে গোলমালের জন্য মেট্রোনিডাজল ও খাওয়ার স্যালাইন সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। সামান্য কাটাছেঁড়ায় স্যাভলন, ব্যান্ডেজ ইত্যাদি লাগে- এগুলো সঙ্গে নেওয়া ভালো। এগুলো কঠিন কাজ নয়। ফার্স্টএইড বক্স নিজের মতো তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।

ভ্রমণের খুঁটিনাটি : ঈদ ভ্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়াটা মোটে কাম্য নয়। তারপরও অনেকেই কিন্তু ভ্রমণের কারণে ঈদের আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কিংবা ঈদের দিনটিতে থাকেন অসুখে আক্রান্ত। বিশেষ করে শিশুরা খুব সহজেই আক্রান্ত হয় সর্দিজ্বর, বমি ও ডায়রিয়ায়। এই অসুস্থতার অন্যতম কারণ কিন্তু অসচেতনতা। ভ্রমণে অভিভাবকরা যদি শিশুদের ব্যাপারে সচেতন থাকেন তাহলে খুব সহজেই কিন্তু এসব শারীরিক বিপত্তি এড়িয়ে চলা সম্ভব। বিষয়টি খুবই সিম্পল। যেমন ধরুন ট্রেনে বাসে কিংবা লঞ্চে ভ্রমণের সময়ে শিশুরা সব সময়েই শিশুরা জানালার ধারের সিটটি পছন্দ করে থাকে। এ কারণে হঠাৎ করেই শিশুরা অতিরিক্ত বাতাসের ঝাপটার মুখোমুখি হয় যা অনেকেরই সহ্য ক্ষমতার বাইরে। এর ফলে শিশুরা অনেকেই ঠিক ভ্রমণের পর আক্রান্ত হয় সর্দিজ্বর কিংবা কাশিতে। ভ্রমণে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ডায়রিয়ায়। এর পেছনে কারণ হলো বাইরের পানীয় এবং খাবার গ্রহণ। আর তাই বাইরের খাবার কোনোভাবেই গ্রহণ করা ঠিক নয়। বিশেষ করে ঘরের তৈরি কিছু খাবার ও পানি সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণে বের হওয়া উচিত। ভ্রমণে খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অনেকেই আছেন বাসে চড়লে সঙ্গে সঙ্গে বমিভাব কিংবা বমি শুরু হয়। ভ্রমণজনিত বমি বা মোশন সিকনেস প্রতিরোধে স্টেমেটিল/ভার্টিনা ট্যাবলেট ভ্রমণের আধা ঘণ্টা আগে গ্রহণ করা যেতে পারে। শিশুরা যাতে যাত্রাপথে বাইরের এটাসেটা খেতে না চায় সে ব্যাপারে উপদেশ দেওয়া উচিত। ভ্রমণে হঠাৎ কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে ভ্রমণে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিটিকে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং সতর্ক করে দিয়ে নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ঈদভ্রমণে সঙ্গী ওষুধ : যারা রোগী তারা ঈদভ্রমণে সঙ্গে করে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া ভ্রমণে সাধারণ লোকজন সঙ্গে করে বেশকিছু নিয়ে যেতে পারেন। যেমন- পেটের গণ্ডগোল, পেটে গ্যাস, বদহজম, সাধারণ সর্দি কাশি, বমি, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, মাসিকের ব্যথা ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ সঙ্গে নিতে হবে। কারণ গ্রামাঞ্চলে অনেক সময়ই প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না। কাজেই ভ্রমণে যেসব ওষুধ সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত সেগুলো হলো- জ্বর, ব্যথা, শরীর ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ। যেমন- নাপা, এইস ইত্যাদি। পেটের পীড়ার জন্য মেট্রোনিডাজল জাতীয় ওষুধ। যেমন- এমোডিস, ফ্ল্যাজিল (ডোজ একটি করে দৈনিক তিনবার- ৫-৭ দিন) খাওয়া যেতে পারে। পেটে গ্যাস, পেটফাঁপা, বুকজ্বলার জন্য এন্টাসিড ট্যাবলেট, পেপটিক আলসারের জন্য রেনিটিডিন (নিওসেপটিন আর/নিওট্যাক) অথবা ক্যাপসুল ওমিপ্রাজল ২০ মি.গ্রা. (ওমেটিড/ওমিগাট/ সেকলো ইত্যাদি) খাওয়ার আগে, ডোজ ১৫০ মি.গা. একটা করে দৈনিক দুইবার গ্রহণ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে কয়েকটি হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্সসহ আপনার পরিচিত কয়েকজন চিকিৎসকের ফোন নম্বরগুলো টুকে নিতে ভুলবেন না।

সর্বশেষ খবর