সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্ষুধা-মন্দা ও হৃদরোগের সম্পর্ক

ক্ষুধা-মন্দা ও হৃদরোগের সম্পর্ক

খাদ্য গ্রহণে অনীহা বা খাদ্যগ্রহণের প্রতি কারও আগ্রহ কমে যাওয়াকে ক্ষুধা-মন্দা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যে কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার সময় ক্ষুুধা-মন্দা দেখা দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের ক্ষুুধা-মন্দা স্বল্পস্থায়ী হয়ে থাকে এবং অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করার পর মানুষের খাদ্যগ্রহণের আগ্রহ আগের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় এবং ব্যক্তি তার স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়। তবে কিছু কিছু দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা থেকেই মানুষের ক্ষুধা-মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং দিন দিন ব্যক্তির শারীরিক ওজন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায় এবং কারও কারও শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে রক্তশূন্যতা, শরীরে পানি জমা হওয়া, চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, ঠোঁটের কিনারে ঘা দেখা দেওয়া, সব সময় ঘুম ঘুম ভাব, মানসিক বৈকল্যতা, ঘুমের মধ্যে আবোল তাবোল কথা বলা ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিয়ে থাকে। যেসব কারণে এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষুধা-মন্দা দেখা দেয় তন্মধ্যে, হার্ট ফেইলুর, কিডনি ফেইলুর, ক্যান্সার, লিভার-সিরোসিস, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অ্যাজমা জাতীয় অসুস্থতা, অত্যধিক রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা বিশেষ করে হৃদরোগ, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, পাইলসের রক্তক্ষরণ ও মেয়েদের মাসিকের সময় অত্যধিক রক্তক্ষরণ হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কারণ। উচ্চরক্তচাপজনিত হৃদরোগ, ডায়াবেটিসজনিত হৃদরোগ, বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ, বংশগত হৃদরোগ, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ (হার্ট ব্লক বা রক্ত সরবরাহের স্বল্পতাজনিত হৃদরোগ), হার্টের বাল্বের সমস্যা, হার্টে জন্মগত ত্রুটি (ছিদ্র) জনিত হৃদরোগ, কার্ডিওমাইওপ্যাথি, মাইওকার্ডাইটিস, পেরিকার্ডাইটিস, থাইরয়েড হরমোনজনিত হৃদরোগ, হার্টে রিং পরার পরবর্তী অবস্থা এবং হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী অবস্থা ইত্যাদি অবস্থায় একটা বিশেষ পরিণতির দিকে ধাবিত হতে থাকে যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হার্ট ফেইলুর বলা হয়। হার্ট যখন শারীরিক প্রয়োজন মোতাবেক রক্ত সরবরাহে অপরাগ হয়ে পড়ে সেই অবস্থাকে হার্ট ফেইলুর বলা হয়, এটার মানে হার্টে দুর্বলতা। হার্ট ঠিক মতো রক্ত পাম্প করতে না পারার জন্য পাম্প হওয়ার অপেক্ষায় অনেক পরিমাণে রক্ত বড় বড় রক্তনালি (ভেইন), লিভার ও পেটে জমা হতে থাকে। এতে লিভারের পেটের নাড়িভুঁড়ির রক্তে চাপ বাড়তে থাকে। এসব অংশে রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে লিভার ও পেটের নাড়িভুড়ির স্বাভাবিক কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হতে থাকে। এসব অঙ্গে রক্তচাপ বৃদ্ধির ফলে এদের আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং উচ্চরক্তচাপের ফলে রক্ত থেকে পানি বের হয়ে পেটে জমা হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে পেটের আয়তন বাড়তে থাকে। পেটের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়াতে পেটে সব সময় একটা ভরাভরা অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে পায়েও একই পদ্ধতিতে পানি জমা হতে থাকে এবং এক সময় এরূপে পানি জমা হওয়া হাত, মুখ, ফুসফুস ও অন্যান্য স্থানেও দেখা দিয়ে থাকে। হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত রোগীর পেটে পানি জমা হওয়া, নাড়িভুঁড়িতে পানি জমা হওয়া ইত্যাদি কারণে ক্ষুধা-মন্দা দেখা দেয় এবং এই ধরনের ক্ষুধা-মন্দা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে পেতে চরম আকার ধারণ করতে পারে। তাই সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ফোন:০১৯৭১৫৬৫৭৬১

সর্বশেষ খবর