বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক উন্নতিতে সিএমএসএমইর ভূমিকা অপরিসীম

সৈয়দ আবদুল মোমেন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড

আলী রিয়াজ

অর্থনৈতিক উন্নতিতে সিএমএসএমইর ভূমিকা অপরিসীম

বাংলাদেশ প্রতিদিন : করোনায় সিএমএসএমই খাত যেভাবে ক্ষতিতে পড়েছিল, তা থেকে কি ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে?

সৈয়দ আবদুল মোমেন : করোনা  মহামারিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সিএমএসএমই খাত। করোনা মহামারিতে সারা দেশের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পরবর্তীতে করোনা মহামারির প্রকোপ কমে যেতে শুরু করলে ব্যবসাগুলো আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এ ছাড়াও সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও অন্যান্য সুবিধার ফলে সিএমএসএমই ব্যবসাগুলো প্রয়োজনীয় চলতি মূলধন পায় এবং তা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করে। বর্তমানে সিএমএসএমই খাত করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে পুনরায় নতুন উদ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কম সুদে যে প্রণোদনা তহবিল হয়েছে, তা কি এই খাতের জন্য যথেষ্ট?

সৈয়দ আবদুল মোমেন : সরকার প্রদত্ত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল, সবচেয়ে কম সুদে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই ব্যবসাগুলোকে ঋণ প্রদানের জন্য গঠন করা হয়। এ ক্ষেত্রে দেশের ব্যাংক ও ননব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণে, সারা দেশের সব ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই ব্যবসাকে তাদের ব্যবসা পুনরুদ্ধারের জন্য চলতি মূলধন ঋণ প্রদান করে। বাংলাদেশের সিএমএসএমই খাতের সর্বোচ্চ অংশ হচ্ছে ট্রেডিং খাত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ট্রেডিং খাতে সবচেয়ে কম অর্থ বরাদ্দ থাকার কারণে এই খাতে সব ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই ব্যবসাকে ঋণ প্রদান করা সম্ভবপর হয়নি। ইতোমধ্যে তিন বছরের এই প্রণোদনা প্যাকেজের দুই বছর সফলতার সঙ্গে পার হয়েছে। আগামী বছরেও এই তহবিল হতে সর্বোচ্চ ঋণ প্রদান করা যাবে বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের উন্নয়নে সিএমএসএমই খাতটি কেমন করছে?

সৈয়দ আবদুল মোমেন : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সিএমএসএমই খাতের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই খাতের অন্তর্গত এবং এই খাত দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। মূলত জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তৈরি এবং দারিদ্র্য বিমোচন এই সিএমএসএমই খাতের মূল লক্ষ্য। দেশের সামগ্রিক জিডিপিতে প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান আসে সিএমএসএমই খাত থেকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের এবং এর উন্নয়নে সরকার ও দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এই খাতের উদ্যোক্তাদের যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, তার যথাযথ ব্যবস্থা কি দেশে আছে?

সৈয়দ আবদুল মোমেন : সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সহায়তার জন্য সব ব্যাংক এবং অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন করছে, যেখানে উদ্যোক্তাদের আর্থিক লেনদেন এবং ব্যবসায়িক হিসাব রক্ষণের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফাউন্ডেশন এবং সমিতিগুলো জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে যাদের মূল লক্ষ্য হলো সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের ব্যবসার আরও উন্নতি সাধন করা।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এই খাতে আপনাদের ঋণ ও গ্রাহক কেমন?

সৈয়দ আবদুল মোমেন : ব্র্যাক ব্যাংকের সর্বমোট প্রদানকৃত ঋণের প্রায় ৫২ শতাংশই সিএমএসএমই খাতে দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা ১০ লাখের বেশি সিএমএসএমই গ্রাহকদের ১ লাখ কোটি টাকার বেশি সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ করেছি। সিএমএসএমই বান্ধব ব্যাংক হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংকের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের সব সিএমএসএমই গ্রাহকদের আর্থিক সুবিধা প্রদান করা। বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকে সর্বমোট ৩ লাখ ৯৫ হাজার সিএমএসএমই গ্রাহক ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণ করছেন, যার মধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজার গ্রাহকের ঋণ সুবিধা চলমান রয়েছে। বিগত মে ২০২২ মাসের হিসাব অনুযায়ী সিএমএসএমই খাতে প্রদানকৃত ঋণের স্থিতির পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই গ্রাহকদের বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে ব্যবসায়িক নথিপত্র কম থাকার কারণে অনেক সিএমএসএমই ব্যবসাই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ পায় না। তবে ব্র্যাক ব্যাংক, ২ হাজার ৫০০ এর অধিক রিলেশনশিপ অফিসারের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা দিয়ে থাকে, যারা গ্রাহকদের ব্যবসা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নথিপত্র, বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদনপত্র ও গ্রাহকের প্রয়োজনীয় আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করে থাকে এবং সেই প্রতিবেদন সাপেক্ষে তাদের ঋণ প্রদান করা হয়।

সর্বশেষ খবর