শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইস্পাত শিল্পে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে চায় জিপিএইচ

ইস্পাত শিল্পে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে চায় জিপিএইচ

 এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ইস্পাত খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে দেশের ইস্পাত জায়ান্ট ‘জিপিএইচ ইস্পাত’। আগামী ১০ বছর পর দেশের মোট রড উৎপাদনের ২৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে চায় জিপিএইচ ইস্পাত।  ‘জিপিএইচ’-এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, দেশের ইস্পাত শিল্পের সম্ভাবনা এবং প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কথা বলেছেন ‘জিপিএইচ ইস্পাত’-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ সেলিম

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রড উৎপাদনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি কোয়ান্টাইম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস ব্যবহার করেছে জিপিএইচ। কীভাবে এ প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টা মাথায় এলো?

আলমাস শিমুল : রড উৎপাদনের সঙ্গে পরিবেশ দূষণের   একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমরা মনে করি ক্রমাগত পরিবেশ দূষণ করতে থাকলে এক সময় প্রকৃতি আমাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করবে। সেই চিন্তা থেকেই ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি’ রড উৎপাদনে মনোনিবেশ করে জিপিএইচ। এ জন্য বাইরের একটি সংস্থাকে গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ছয় মাস গবেষণার পর দেশে কোয়ান্টাইম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে মত দেন। এরপর প্রযুক্তি    এবং দূরদর্শিতার সমন্বয়ে জিপিএইচ কোয়ান্টাইম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি স্থাপন করে। এ প্রযুক্তি স্থাপনের ফলে বায়ুতে ডাস্ট পার্টিক্যাল নিঃসরণ মাত্রা বিশ^ব্যাংক এবং  পরিবেশ অধিদফতরের বেঁধে দেওয়া মানদন্ডের চেয়ে কম চলে আসে। ডিসচার্জ প্রক্রিয়ায় পানি সঞ্চালন এবং শোধন ব্যবস্থা ভূমিকে রেখেছে দূষণমুক্ত। সর্বোপরি কোয়ান্টাইম     ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তির কারণে এশিয়ার সর্বাধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব ইস্পাত কারখানায় পরিণত হয়েছে জিপিএইচ।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : জিপিএইচ ইস্পাত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আলমাস শিমুল : একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য উৎপাদিত এবং ব্যবহার্য পণ্যের গুণগতমানের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান ঠিক রাখার কারণেই ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ আজ উন্নতির শিখরে। তাই জিপিএইচ গুণগতমান নিয়ে মনোনিবেশ করেছে। এরই অংশ হিসেবে কোয়ান্টাইম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি স্থাপন করেছে। আমরা চাই পোশাক খাতের মতো ইস্পাত শিল্পও বিশ^দরবারে নেতৃত্ব দিক। আমাদের পরিকল্পনা আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের চাহিদার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ইস্পাত জিপিএইচ উৎপাদন করবে। শুধু তাই নয়, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বড় পরিসরে বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য সেক্টরে আমরা ইউরোপ, জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশকে আমরা অনুসরণ করি। কিন্তু ইস্পাত শিল্পে তারা এখন আমাদের অনুসরণ করছে। কোয়ান্টাইম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি দেখতে ইউক্রেন, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের কারখানা পরিদর্শন করতে আসছেন। তারা অভিজ্ঞতা  লাভ করছেন। এতে করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাদের আর কোনো বড় প্রকল্প আসছে কি?

আলমাস শিমুল : কোয়ান্টাইম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে আমরা খুবই সাড়া পাচ্ছি। ইঞ্জিনিয়াররা এটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। দিন দিন এটার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এটাকে আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি গার্ডার, আই বিম, রেডি রড, সেকশন, অ্যাঙ্গেল, চ্যানেল, এইচ বিমসহ যেসব নির্মাণসামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় তা উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সর্বোপরি দেশকে ইস্পাত শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য যত প্রকল্প করা দরকার তা করার পরিকল্পনা রয়েছে।  

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ইস্পাত শিল্প সম্প্রসারণে মূল প্রতিবন্ধকতা কী?

আলমাস শিমুল : এক সময় ইস্পাত শিল্পে প্রতিটি পদে পদে প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কিছু পদক্ষেপের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তারপরও আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেযথাসময়ে কাঁচামালের জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারে না। ফলে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়। বহির্নোঙরে জাহাজ লাইটারিংয়ে ভালো জায়গা নেই। ফলে যথাসময়ে লাইটারিং করতে না পারার কারণে খরচ বেড়ে যায়। বন্দর থেকে কাঁচামাল আনার সময় প্রায় পণ্য লুট করে ডাকাতরা। এটার কারণে প্রতি বছর ১ থেকে ২ শতাংশ মাল ডাকাতি হয়। ফলে এ খাতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় একেক কোম্পানির। এ ছাড়া বিদ্যুতের দাম এ শিল্পের জন্য বড় ফ্যাক্টর। সরকারের কাছে ট্যারিফ আরও কমানোর দাবি করছি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ইস্পাত শিল্প সম্প্রসারণে কোনো প্রস্তাবনা রয়েছে কি?

আলমাস শিমুল : ইস্পাত শিল্প সম্প্রসারণ নিয়ে দেশে কোনো গবেষণা নেই। জিপিএইচ ইস্পাত স্বল্প পরিসরে গবেষণা শুরু করেছে। তাই ইস্পাত শিল্প-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত এটা নিয়ে বড় ধরনের গবেষণা করা। এতে করে ইস্পাত শিল্পের প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাবনা বিষয়ে জানা যাবে। এ ছাড়া ইস্পাতের ক্যাটাগরি করাও জরুরি। কোন ক্যাটাগরির ইস্পাত দিয়ে কোন ধরনের স্থাপনা করা হবে, সে বিষয়ে ক্যাটাগরি করা দরকার। ক্যাটাগরি করলে বড় বড় শিল্প গ্রুপ ভালো ও উন্নতমানের প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে উৎসাহিত হবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ‘গ্লোবাল মেটাল অ্যাওয়ার্ড’-এর দুটি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছে জিপিএইচ। এ বিষয়ে যদি বিস্তারিত বলতেন?

আলমাস শিমুল : সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্লোবাল মেটাল অ্যাওয়ার্ড’-এর দুটি ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত। এ দুই ক্যাটাগরি হলোবেস্ট নিউ টেকনোলজি এবং লিডারশিপ ইন স্টিল। এটা অনন্য অর্জন। এ দুই ক্যাটাগরিতে বিশ্বের কয়েক হাজার জায়ান্ট সব ইস্পাত তৈরি কারখানাগুলোকে পেছনে ফেলেছে জিপিএইচ। এটা আমাদের এবং দেশের জন্য গর্বের।

 

সর্বশেষ খবর