বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্থনীতিতে আলো দেবে রামপাল

জয়শ্রী ভাদুড়ী, রামপাল থেকে ফিরে

অর্থনীতিতে আলো দেবে রামপাল

বহুল আলোচিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হচ্ছে অক্টোবরে। দেশের বিদ্যুৎ খাতকে এগিয়ে নিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখবে এ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ৬ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে এ ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে।

বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) প্রকল্প পরিচালক সুভাস চন্দ্র পান্ডে বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট ৯১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আমরা লোড দিয়েছি। ধারাবাহিকভাবে তা বাড়িয়ে সক্ষমতা যাচাই করব। আমাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আগামী অক্টোবর শেষ নাগাদ খুলনা অঞ্চলের জন্য ইউনিট-১ এর মাধ্যমে একটি লাইনে ৬৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে পারব।’

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে দ্রুত গতিতে চলছে কাজ। খুলনা অঞ্চলের জন্য বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণও শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিড সংযুক্ত করা হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সঙ্গে। সঞ্চালন লাইনটির জন্য নির্মিত সুইচ বোর্ড এখন পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার করছে বলে জানান সুভাস পান্ডে।

পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসা উচ্চ ভোল্টের বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয় খুলনা অঞ্চল। সেজন্য রামপালের সুইচ বোর্ড ব্যবহার করে ভোল্টেজ কমিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত এ সুইচ বোর্ড জাতীয় গ্রিডও ব্যবহার করছে, যা একটি বড় ধরনের সুবিধা বলেও মনে করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নাম দাফতরিকভাবে সংক্ষেপে বিআইএফপিসিএল হলেও এর পরিচিতি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নামেই।

সরেজমিন দেখা যায়, দুটি ইউনিটের মাধ্যমে দুটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এর মধ্যে ইউনিট-১ খুলনা অঞ্চলের জন্য, যেটি আগামী অক্টোবরেই পুরোদমে উৎপাদনে যাচ্ছে। আর ইউনিট-২ উৎপাদনে যাবে আগামী বছরের মার্চে। ইউনিট-২ উৎপাদনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরো সক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে।

পুরো প্রকল্পের প্রস্তুতি ৮২ দশমিক ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান। রামপালের পশুর নদীর তীরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। বয়লার ঠা-ন্ডা ও উচ্চ চাপ তৈরি করতে এ নদী থেকেই প্রতিদিন পানি সংগ্রহ করা হবে। বিদ্যুৎ তৈরির প্রধান কাঁচামাল হবে আমদানি করা কয়লা। রামপালে স্থাপিত কেন্দ্রটিতে দেশীয় কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়।

সুভাস পান্ডে বলেন, ‘প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪৫০ গ্রাম কয়লা লাগবে, যদি সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করা হয়। পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে প্ল্যান্টের সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করার সময় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ পরিমাণ কয়লা লাগবে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে কয়লার ব্যবহার। কেন্দ্রটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেবে। আর বিতরণ পর্যায়ে দাম কত হবে, তা নির্ধারণ করবে সরকার। তবে এই কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম কয়লার দরের ওপর নির্ভর করবে জানিয়ে সুভাস পান্ডে বলেন, ‘এটি কারও হাতে নেই। বিশ্ববাজারে কয়লার দাম কেমন হবে, তা সময় বলতে পারবে।’

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, এখানে ধোঁয়া নির্গমনে ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে, যেন পরিবেশের ওপর ঝুঁকির মাত্রা সর্বনি¤œ থাকে। এ ছাড়া বাতাসে ধোঁয়া ছাড়ার আগে এফজিডি (দ্য ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন) সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। সুভাস পান্ডে বলেন, ‘এর মাধ্যমে বয়লার থেকে বের হওয়া ক্ষতিকর সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস আর বাইরে যাবে না। তা পিউরিফাই (পরিশোধন) হয়ে চিমনির বাইরে বের হয়ে বাতাসে মিশবে, যা বাতাসকে দূষণ করবে না। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহৃত হওয়ার পর গরম পানি পশুর নদীতে ফেলার আগে ঠা-ন্ডা করা হবে, যাতে নদীর পানির গুণাগুণ অক্ষত থাকে।’ ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি দিচ্ছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা করে। বাকি অর্থের জোগান দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর