বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতুতে কৃষিবিপ্লব দক্ষিণাঞ্চলে

♦ কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থা সহজ, ঢাকামুখী ব্যবসায়ীরা ♦ প্রতিদিন ৪০০ টন সবজি যায় ঢাকায়, চার ঘণ্টায় পণ্য বিক্রি করে ফিরতে পারছেন চাষিরা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

পদ্মা সেতুতে কৃষিবিপ্লব দক্ষিণাঞ্চলে

পদ্মা সেতু চালুর পর যাতায়াত ও বিপণন ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে ‘সবুজ বিপ্লব’ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এনে ধান, গম, তরমুজ অফসিজনের ফল, শাকসবজিসহ উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ শুরু হয়েছে।

মাত্র ৪ ঘণ্টায় খুলনা থেকে রাজধানীর পাইকারি সবজি বাজারে পণ্য নিতে পারছেন চাষিরা। ফলে পচনশীল কৃষিপণ্য বিক্রিতে অনিশ্চয়তা না থাকায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোরে কয়েক গুণ সবজি উৎপাদন বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, পদ্মা সেতু চালুর পর কৃষিপণ্য বিক্রি সহজতর ও লাভজনক হওয়ায় ঢাকামুখী প্রবণতা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। আগে ফেরি পারাপারে সময়ক্ষেপণ ও ট্রাকের ভাড়া দেড় গুণ বেশি হওয়ায় কৃষিপণ্য ঢাকায় নিতে আগ্রহী হতেন না চাষিরা। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ টন সবজি নেওয়া হচ্ছে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে।

খুলনার বৃহৎ সোনাডাঙ্গা পাইকারি কাঁচাবাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম নাসির জানান, আগে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ ট্রাক কৃষিপণ্য খুলনার বাজারে আসত। কিন্তু এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। টমেটো, মুলা, শসা, বেগুন, শিম, বরবটি, ঝিঙা, লাউ, শাকসবজি নিয়ে ১০ টনের ট্রাকের পাশাপাশি ছোট তিন টনের ট্রাকও ঢাকায় চলে যাচ্ছে। কৃষিপণ্য পচে যাওয়ার শঙ্কা না থাকায় উৎপাদনও বেড়েছে বহু গুণ।

রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান জানান, চলতি খরিপ-২ মৌসুমে এখানকার ৪৬০ হেক্টর জমিকে সবজি চাষের আওতায় আনা হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় চাষিরা শসা, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, টমেটো, ডাটা, বরবটিসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করছেন। যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় সকালে রওনা দিয়ে তারা ঢাকার মার্কেট ধরতে পারছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুল হক জানান, লবণাক্ততার কারণে এখানকার চাষযোগ্য ১৩ লাখ হেক্টর জমির অধিকাংশ ছিল একফসলি। লবণসহিষ্ণু ফসলের জাত চাষিদের আগ্রহী করে তুলছে। ধান ছাড়াও নানা রকমের সবজি, গম, ভুট্টা, আলু, ছোলা, মসুর, সয়াবিন, চীনাবাদাম, মসুর-সরিষার জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উপকূলবর্তী চাষিদের মধ্যে সম্প্রসারণে রোডম্যাপ প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান আছে। সেই সঙ্গে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত সহজ হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ডুমুরিয়ার পাইকারি কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী বাইজিদ হোসেন বলেন, ‘এখন ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা থেকে ট্রাকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকার মোকামে পৌঁছানো যায়। আগে লাগত ১২ ঘণ্টার বেশি। দূরত্ব ও সময় কমার কারণে ট্রাকভাড়া কমেছে। ফলে খুলনা থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে বিপণন সহজতর হওয়ায় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে কৃষিবিপ্লব হয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হলে কৃষক চাষাবাদে আরও আগ্রহী হবেন এবং কৃষি উৎপাদন বাড়বে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খুলনা কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, খুলনায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে এবার তরমুজ চাষ হয়েছে। উৎপাদিত তরমুজের বাজার মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এসব তরমুজের ৭০ শতাংশ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। কৃষি বিপণন অধিদফতর, খুলনা বিভাগের উপপরিচালক সিফাত মেহনাজ জানান, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রিতে পরিবর্তন এসেছে। আগে কৃষিপণ্যের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি হলেও চাষি দাম পেতেন না। এখন পদ্মা সেতু চালুর পর সহজে এসব পণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যেতে পারছে।

সর্বশেষ খবর