বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বরেন্দ্র লালমাটিতে পান চাষ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বরেন্দ্র লালমাটিতে পান চাষ

রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের আওতাধীন বরেন্দ্র ভূমিখ্যাত রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। পদ্মা-মহানন্দা-করতোয়া নদীবেষ্টিত বরেন্দ্র ভূমির অবস্থান গ্রীষ্মপ্রধান মৌসুমি মন্ডলে। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এই অঞ্চলের কৃষিকে এনে দিয়েছে সমৃদ্ধি। প্রকৃতি এখানে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। এই অঞ্চলের অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে পান একটি। কৃষকের কাছে এটি কাঁচা সোনা। প্রতিদিন পানপাতা তুলে বিক্রি করে নগদ টাকা হাতে পাচ্ছেন চাষি। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার রইপাড়া এলাকার চাষি মোহাম্মদ জনাব। জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় কয়েক প্রজন্ম ধরে পান চাষ করে আসছেন তিনি। দুই বছর ধরে তিনি ঠা-ঠা বরেন্দ্র ভূমি রাজশাহীর কাঁকনহাটে গড়ে তুলেছেন পানবরজ। মোহাম্মদ জনাব ভাই ও ছেলেকে নিয়ে পানপাতা সাজাচ্ছিলেন। কঠিন মাটিতে পানচাষ শুরুর গল্প শুনিয়েছেন অদম্য এই চাষি। তিনি বলেন, পেয়ারা চাষের জন্য দুই বিঘা জমি ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু পেয়ারায় লাভ করতে পারেননি। তার বাবা পানচাষি ছিলেন। তিনিও পান চাষে যুক্ত বহুকাল থেকেই। তার প্রশ্ন ছিল, এই মাটিতে অন্যান্য ফসল হলে, পান কেন নয়?

বছর দুয়েক আগে মোহাম্মদ জনাব নেমে পড়েন পান চাষে। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি করেন বরজ। ছয় মাস ধরে পানপাতা সংগ্রহ করছেন। নতুন বরজ, প্রতি সপ্তাহে এখন ১ হাজার ২০০ টাকার পান উঠছে। এক বছর পর এই আয় বাড়বে অন্তত পাঁচ গুণ।

মোহাম্মদ জনাব বলেন, বরেন্দ্র এলাকার লোকজন পানবরজের কাজ জানেন না।

তাই বাইরে থেকে কর্মী আনতে হচ্ছে। অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বরজে কাজ করছেন। তা ছাড়া খুচরা বাজার থাকলেও পানের স্থানীয় পাইকারি বাজার নেই। ফলে পানপাতা সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য দুর্গাপুরের হাটে তুলতে হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে খরচা। কমছে লাভের পরিমাণ। এই পানচাষির ভাষ্য, বরেন্দ্র এলাকায় পান চাষে বড় প্রতিবন্ধকতা এখানকার মাটি। অল্প বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আবার খরায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। এই দুটি পরিস্থিতি পান চাষের জন্য ক্ষতিকর। সংকট কাটাতে বাইরে থেকে মাটি এনে বরজে দিতে হচ্ছে। বরেন্দ্রজুড়ে পান চাষের এই সংকটের কথা স্বীকার করেছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন। তিনি বলেন, পান চাষের জন্য প্রধানত উঁচু জমি লাগে। পানে লাভ পাওয়ায় কয়েক বছর ধরে বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি জমে যায় এমন নিচু জমিতেও পান চাষ করছেন। এবারের কয়েক দফা বন্যায় জেলার মোহনপুর, দুর্গাপুর ও বাগমারায় বেশ কিছু পানবরজ ডুবে গেছে। এতে পানচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আঞ্চলিক কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই রাজশাহী অঞ্চলে বাড়ছে পান চাষ। ২০১৬-১৭ কৃষিবর্ষে রাজশাহী জেলায় পানবরজ ছিল ২ হাজার ১৯৬ হেক্টর। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৮৪ হেক্টরে। ২০১৮-১৯ কৃষিবর্ষে পান চাষের আওতা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৮৮৯ হেক্টর। ২০১৯-২০ কৃষিবর্ষে রাজশাহীতে ৪ হাজার ৩১১ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর