বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সংকট তৈরি করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে

কাজী জামিল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, লোটো বাংলাদেশ

সাইফ ইমন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সংকট তৈরি করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  কেমন চলছে লোটো বাংলাদেশ- এর কার্যক্রম?

কাজী জামিল ইসলাম : আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে গোটা বিশ্বই একটা শঙ্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পেট্রোল ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাজারে। ফলে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। সর্বোপরি ব্যবসার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। মানুষজনের দৈনন্দিন জীবনের খরচের হিসাব মিলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফ্যাশনেবল পণ্যের ওপর। বিগত কয়েক মাসেই এর প্রভাব বেশি পড়েছে। এর আগে আমরা ভালোই ছিলাম। করোনার সংকট কাটিয়ে ভালোভাবে ব্যবসায় ফিরতে না ফিরতেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন করে সংকট তৈরি করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  এমতাবস্থায় উত্তরণের উপায় কী?

কাজী জামিল ইসলাম : দেশের সরকার পারে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দিতে। আর নিজেদের উত্তরণের পথ নিজেদেরই বের করতে হবে। পৃথিবীতে কেউ কাউকে হেল্প করে না। সরকার দেশের ল’ অ্যান্ড অর্ডার ঠিক রাখুক এটা প্রত্যাশা সবার। আর বাকি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিনই হবে যত দিন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে।  

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  বাংলাদেশে লোটো ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় আপনার শুরুর গল্পটা জানতে চাই।

কাজী জামিল ইসলাম : চাকরি করতে করতে একটা পর্যায়ে মনে হলো নিজে কিছু একটা করি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। নেমে পড়ি ব্যবসায়। শুরুতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এমন কি আমার স্ত্রীকে টিউশনি পর্যন্ত করতে হয়েছে। প্রথমে ছোট করে শুরু করলেও এখন ব্যবসা বড় হয়েছে। প্রথমে খুব স্বল্প পরিসরে মোট ৩৫ জন সেলসম্যান এবং কর্মী নিয়ে বাংলাদেশে লোটোর যাত্রা শুরু করি।  এভাবেই এক সময় ব্র্যান্ডটি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাজারে। ফলে আমার দায়িত্ব বেড়ে গেছে। ১৮০০ লোককে প্রতি মাসে বেতন দিতে হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার চ্যালেঞ্জে আপনার সফলতা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

কাজী জামিল ইসলাম : চাকরি ছাড়ার পর প্রথমে সুপার মার্কেট করেছিলাম। দীর্ঘদিন জুতার ব্যবসায় জড়িত ছিলাম। ফলে এক সময় জুতার ব্যবসায় এলাম। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে যে, বিশ্বের সেরা জুতা তৈরি হয় ইতালিতে। আরও অনেক ব্র্যান্ডই তখন বিশ্ববাজারে। কিন্তু আমি বেছে নিই ইতালির ব্র্যান্ড লোটো। আর এই ব্র্যান্ডের জুতার দামও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের তুলনায় সাশ্রয়ী। এই ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতায় ২২০টির মতো আউটলেট চালু করতে পেরেছি বাংলাদেশে। 

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  পণ্যের মান ও ডিজাইনের ক্ষেত্রে আপনাদের কার্যক্রম কী?

কাজী জামিল ইসলাম : এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখতে ডিজাইনের সাপোর্ট পাওয়া যায় লোটো  থেকে। এ ছাড়াও আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞ ডিজাইনিং বিভাগ রয়েছে। তাদের কাজই হচ্ছে মানুষের আরামের দিক মাথায় রেখে নিত্য নতুন ডিজাইন নিয়ে আসা। আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী জুতা তৈরি করতে হয়। ইউরোপের সব ডিজাইন এখানে চলবে না ইত্যাদি নানা দিক খেয়াল রাখতে হয়। 

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  লোটো ব্র্যান্ডের বিশেষত্ব কী কী?

কাজী জামিল ইসলাম : আমাদের জুতাগুলো টেকসই ভালো এবং সাশ্রয়ী। পছন্দ করার মতোই ডিজাইন। অন্য যে কোনো স্পোর্টস ব্র্যান্ড থেকে আমাদের ব্র্যান্ড নম্বর ওয়ান বাংলাদেশে। ভোক্তারা পণ্য ব্যবহার করে তৃপ্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য পেলেই আসলে আমাদের সফলতা। মনে রাখতে হবে, জুতার মতো দেখতে হলেই সব জুতা জুতা নয়। আপনার শরীরের ভর যে দিনের অনেকটা সময় বহন করছে এটা স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া খুব জরুরি। শুকতলা খুবই কমফোর্টেবল হতে হবে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী জুতা বিক্রি করেন। আমরা জুতার সঙ্গে টেকনোলজিও বিক্রি করি। আমরা আমাদের সব পণ্যে আধুনিক প্রযুক্তি আনার চেষ্টা করি যেন তা ভোক্তার জন্য সর্বোচ্চ আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়। 

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  দেশে আপনাদের ব্যবসায়িক পরিধি সম্পর্কে বলুন।

কাজী জামিল ইসলাম : সারা দেশে প্রতিটি জেলায় পৌঁছে গেছে লোটো বাংলাদেশ। এক সময় আশা করতে পারি আমরা নিশ্চয়ই থানা পর্যায়েও পৌঁছে যাব। সেখানে হয়তো খুব বড় আকারে না হলেও স্বল্প পরিসরে হলেও স্টোর করতে পারব। তাহলে মানুষ কম খরচের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের জুতা আরও বেশি বেশি ক্রয় করার সুযোগ পাবেন।  সাধ্যের মধ্যে পেলে অস্বাস্থ্যকর মানহীন জুতার চেয়ে নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক মানের জুতা মানুষ বেছে নেবেন। এ কারণেই আমি মনে করি আমাদের ব্যবসায়িক উন্নতি অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ভালো। 

 

সর্বশেষ খবর