অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণে সীমাহীন উদাসীনতার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২৩% ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চুমু দেয়া থেকে গোপন অঙ্গে স্পর্শ করা ছাড়াও পর ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এবং কখনো কখনো ভয়-ভীতি প্রদর্শন করার মধ্য দিয়ে এহেন জঘন্য কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে।
‘এসোসিয়েশন অব আমেরিকান ইউনিভার্সিটি’ পরিচালিত সর্বশেষ এক জরিপে উদ্বেগজনক এ তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। এ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হান্টার রোউলিঙ্গস বলেন, "শিক্ষাঙ্গনের এহেন কর্মকাণ্ডকে অবহেলার সুযোগ থাকতে পারে না। মূলতঃ এটিকে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবেই মনে করা উচিত এবং সকলকে তা প্রতিরোধে সোচ্চার থাকা জরুরি।"
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ২৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় লাখ ছাত্রীর উপর পরিচালিত হয় এ জরিপ। আইভি লিগ স্কুলসহ আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ছাত্রীরাও ছিলেন এ জরিপে।
কলেজের সিনিয়র ছাত্রীদের উপর যৌন হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। ৪ বছরের কোর্স সম্পাদনের সময়ে তারা এহেন হামলার শিকার হয়েছেন, যার হার ২৬%। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানে এ হার আরও বেশি ৩৪%। ইয়েল ভার্সিটিতে ৩২% এবং হার্ভার্ডে ২৯% বলেও জরিপে উদঘাটিত হয়েছে।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট ড্রিউ ফোস্ট এ জরিপ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ এমন নাজুক পরিস্থিতির শিকার আমরা সকলেই।’ এহেন আচরণকে সহ্য করা যায় না। তাই, সামাজিকভাবেও প্রতিরোধ রচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন ড্রিউ। ইতোমধ্যেই হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে অতিরিক্ত স্টাফ নিয়োগ করা হয়েছে যৌন হামলার অভিযোগ পাবার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তের জন্যে। ওই জরিপে যে পরিস্থিতি উঠে এসেছে, তাকে নীরবে হজম করার সময় নেই। সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন ড্রিউ।
এদিকে, শ্রমিক-কর্মচারিরা অবসরকালীন সময়ের জন্যে কীভাবে সঞ্চয় করতে পারেন সে ব্যাপারে গবেষণা করছিলেন এনরিচেটা রাভিনা। এ গবেষণার জন্যে তিনি কলম্বিয়া বিজনেস স্কুলের স্কলারশিপ পান। মহা-আনন্দে শুরু করেন কাজ। তার শিক্ষক হচ্ছেন জিয়ার্ট বিকার্ট। শিক্ষকের নির্দেশ ও পরামর্শ অনুযায়ী কাজের সময় রাভিনা (৪০) অনুধাবনে সক্ষম হন যে, তার শিক্ষক জিয়ার্ট তার সাথে অশ্লীল আচরণ করতে চাচ্ছেন। কথায় কথায় পর্নোছবির প্রসঙ্গ টানেন এবং নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। কিন্তু রাভিনা সে সব বুঝেও না বুঝার ভান করে গবেষণা অব্যাহত রাখেন। এক পর্যায়ে তাকে ‘সেক্সি’ হিসেবেও উল্লেখ করেন ওই শিক্ষক। ওই শিক্ষক তাকে জানিয়ে দেন যে, তার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হলে গবেষণার বিস্তারিত ডাটা সহজেই পাওয়া যাবে।
২০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবিতে নিউইয়র্ক ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত মামলায় রাভিনা আরও উল্লেখ করেছেন, ২০১৪ সালের মে মাসে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরে অভিযোগ করেও কোন ফায়দা পাননি। অধিকন্তু একজন অধ্যাপক তাকে পরামর্শ দিয়েছেন, এমন অভিযোগ প্রত্যাহার করে ওই শিক্ষকের কথামত কাজ করতে। আরেকজন বলেছেন, এগুলো কোন ঘটনাই না। গবেষণাকেই গুরুত্বপূর্ণ ভাবা উচিত।
এরপর ক্ষুব্ধ রাভিনা ম্যানহাটানস্থ ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ওই মামলা করেন। এ মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, ‘বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে কোন কথা বলা সমীচিন হবে না। তবে অভিযোগটিকে কর্তৃপক্ষ খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।’
আরেক খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বাকলে। সেখানকার ল’ স্কুলের ডিন সুজিত চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন গত ২৩ মার্চ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তার নির্বাহী সহকারীকে প্রতিদিনই জোরপূর্বক বুকে জড়িয়ে চুমু দিতেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারি বাস্কেটবল কোচ এবং একজন এস্ট্রোনমারকেও বিদায় দেয়া হয়েছে গত বছর যৌন হয়রানির অভিযোগে। যৌন হয়রানির আরো ১৬টি অভিযোগের তদন্ত চলছে। এরমধ্যে ৯টি হচ্ছে যৌন হামলার সময়ে মারপিটে লিপ্ত হবার অভিযোগ।
সুজিত চৌধুরী দোষ স্বীকার করে পদত্যাগ করা সত্ত্বেও ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাকে গোপনে জানিয়ে রেখেছেন পুনরায় কাজে যোগদানের জন্যে। অপরদিকে, যিনি অভিযোগ করেছিলেন তাকে বলা হয়েছে অন্যত্র চাকরি খোঁজার জন্যে।
২৯ মার্চ প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের দুইশ' কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের উপর যৌন হয়রানির তদন্ত চালাচ্ছে ফেডারেল গোয়েন্দারা। দু’বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ৫৫টি। অর্থাৎ দিন যত যাচ্ছে, ছাত্রীর উপর যৌন হামলার ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বাবদ প্রশাসনের ব্যয় হচ্ছে বিপুল অর্থ।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ এপ্রিল, ২০১৬/ রশিদা