১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিরক্ষার জন্য এবার ত্রিপুরাতেও তৈরি হচ্ছে পার্ক ও ওয়ার মিউজিয়াম। ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে এবং ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ত্রিপুরার ছোত্তাখোলায় ২০ হেক্টর জমিতে তৈরি হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান। এই উদ্যানেই তৈরি হবে একটি মিউজিয়াম, যেখানে রাখা থাকবে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ সহ আরও অনেক কিছু।
ত্রিপুরার বাম বিধায়ক সুধন দাস জানান, ২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে গিয়ে সেদেশের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখে আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ছোত্তাখোলায় একটি মেমোরিয়াল করবো কিন্তু পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বাংলাদেশ সফরে গিয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তারপর এই প্রকল্পটির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়। ২০১০ সালের নভেম্বর এই পার্কটির শিলন্যাস করেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণি। তিনি আর ও জানান এই পার্কটি নির্মাণের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ২১ কোটি রুপির একটি প্রকল্প জমা দিয়েছিলাম কিন্তু সরকারের তরফে কোন সাড়া না পাওয়া যায়নি। এরপর ত্রিপুরা রাজ্য সরকারই এই পার্কটি উন্নয়নে ৪ কোটি রুপি ব্যায় করেছে’।
আগামী তিন মাসের মধ্যেই এই পার্কটি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে। পার্কটির সৌন্দর্যায়নে ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের যেসব বিশিষ্ট শিল্পীদের অনুদান আছে তাদেরও পার্কটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। পার্কটির ভিতরেই একটি মিউজিয়ামও গড়ে তোলা হচ্ছে। যেখানে স্বাধীনতার যুদ্ধে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্র, গোলাবারুদ, দুর্মূল্য ছবি, স্বাধীনতার দলিল, সাহিত্যসহ বিভিন্ন জিনিস স্থান পাবে। ওই উদ্যানটিতে ২২০ প্রজাতির গাছও লাগানো থাকবে। পার্কটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পার্কটির চারিদিকে পাহাড়ের মতো ছোট ঢিপি, তৃষ্ণা অভয়ারণ্য এবং বাংলাদেশের কুমিল্লার কাছে ৫০০ বছরের পুরোনো মসজিদও স্থান পাবে। পুরো প্রকল্পটির বাস্তাবায়নের ভার রয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের বন ও গ্রামোন্নয়ন, পূর্ত, উদ্যান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পানি সম্পদ ও শক্তি মন্ত্রালয়ের ওপর।
প্রসঙ্গত, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম হল ছোত্তাখোলা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য এই গ্রামেই মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বাহিনী একটি শিবির করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সদর কার্যালয় ছিল এই ত্রিপুরা। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ১৪ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটিতে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৯ জুন, ২০১৬/ আফরোজ