বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা (এনডিএ) সরকারের শ্রমিক বিরোধী নীতি প্রতিবাদ ও মজুরী বৃদ্ধি সহ একধিক দাবিতে শুক্রবার ভারতের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের আহবানে চব্বিশ ঘন্টা (সকাল-সন্ধ্যা) দেশ জুড়ে সাধারণ হরতালে এখন পর্যন্ত মিশ্র সাড়া পাওয়া গেছে।
পশ্চিমবঙ্গে যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক। শিয়ালদহ ও হাওড়া রেল স্টেশন থেকে মোটামুটি সময়েই চলছে ট্রেন। রাস্তায় বাস, ট্রাক্সি, অটো সবকিছুই চলছে যদিও গাড়িতে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কম। দমদম বিমানবন্দর থেকেও বিমান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সল্টলেকে তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরেও হরতালের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এদিন সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হরতাল রুখতে রাস্তায় নেমেছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে তৎপর কলকাতা পুলিশও। সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, যানবাহন যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কলকাতা শহরের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়-এ পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। তবে এরই মধ্যে বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তি ও ভাঙচুড় হয়েছে। মধ্যমগ্রামে হরতাল সমর্থনকারী ও হরতাল বিরোধীদের মধ্যে বচসা হয়। তবে সময়মতো পুলিশ হস্তক্ষেপ করায় বড় কোন সংঘর্ষের চেহারা নেয়নি। শিলিগুড়িতে হরতালে সমর্থনে মিছিল করার অভিযোগে শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য ও সিপিআইএম নেতা জীবেশ সরকার সহ কয়েকজনকে আটক করে। যাদবপুরের ৮ বি বাসস্ট্যান্ডেও দুই পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। হরতাল ঘিরে কোচবিহার থেকেও বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর পাওয়া গেছে। হরতাল সফল করতে কোচবিহার থেকে শিলিগুড়িগামী ২টি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে খবর। উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগম থেকে ওই বাস ২টি বেরোনোর পর প্রথম বাসটিতে ভাঙচুর চালানো হয়। হলদিয়া, দুর্গাপুর, ব্যারাপকুর শিল্পাঞ্চলেও অন্যান্য দিনের মতো কাজকর্ম স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। এদিকে ভ্যাটিকান সিটিতে মাদার টেরেজাকে সেন্ট হুড উপাধি প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উড়ে যাওয়া আগে আজ সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে রাজ্যবাসীর উদ্যেশ্যে মমতা বলেন ‘হরতাল সম্পূর্ণ ব্যার্থ হবে। আমি নিজেও মনিটরিং করবো। আজ এখান থেকে চলে গেলেও আমি দুবাই থেকে মনিটরিং করবো। আমরা সারাদিনই মনিটরিং করছি এবং আমাদের প্রশাসন থেকে শুরু করে মন্ত্রী, কর্মকর্তা সবাইকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা আপনাদের সবাইকে আর্জি জানাবো যে শান্তিপূর্ণ ভাবে বাংলাকে সচল রাখুন’।
বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা, অসম সহ অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও এখনও পর্যন্ত হরতালের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। রাজধানী দিল্লি ও বাণিজ্য নগরী মুম্বাইতে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এ রাজ্য দুইটিতে পানি সরবরাহ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও সচল আছে। যদিও বেশিরভাগ রাজ্যেই সরকারি ব্যাংক ও সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে স্কুল-কলেজ, বেসরকারি ব্যাংকগুলি খোলা আছে। কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার আজকের এই হরতালকে সমর্থন করছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে, রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় খুবই কম।
অন্যদিকে কেরলে হরতালের বেশ ভাল প্রভাব পড়েছে। সরকারি যান রাস্তায় নামেনি বললেই চলে, তুলনায় বেসরকারি যানবাহনের দেখা পড়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কর্মীদের উপস্থিতির হার অনেকটা কম। বন্ধ স্কুল-কলেজ।
বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর