টাকার অভাবে পোলিও চিকিৎসা করাতে না পেরে শিশুটিকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলেন দরিদ্র বাবা-মা। সেই ছোট্ট বাচ্চাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় মাদার তেরেসার মিশনারিজ অব চ্যারিটিতে। দুই বছর শিশু ভবনে কাটানোর পর পাঠানো হয় রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর চিলড্রেনে। সেখানেই তার আলাপ হয়েছিল নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট প্যাট্রিসিয়া লুইসের সঙ্গে। এতিম শিশুটির দিকে দরদী হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্যাট্রিসিয়া। সেই হাত ধরেই সারাজীবনের মতো ইংল্যান্ডে পাড়ি দেয়। মাদার হাউজের অনাথ শিশু হয়ে যায় প্যাট্রিসিয়ার দত্তক পুত্র গৌতম লুইস।
এরপর ইংল্যান্ডের প্রেস্টিজিয়াস বেডলস স্কুলে শুরু হয় গৌতমের পড়াশোনা। নতুন নাম, নতুন পরিচয়, নতুন জীবন। ধীরে ধীরে বিজনেস ডিগ্রি পাশ করে সঙ্গীতচর্চা। শেষে হয়ে গেলেন পাইলট।
গৌতম বলেন, এক সময় শিশুভবনের ছাদ থেকে আকাশ দেখে মুক্তির স্বাদ পেতাম। সেই আমি কি না এ বার মাত্র ছ’মাসের মধ্যে পাশ করে ফেললাম পাইলট হওয়ার সব গ্রাউন্ড ও এয়ার এগজামিনেশন। তখন ২০০৭। পোলিওর ভয়ানক প্রকোপ কাটিয়ে উঠে দাঁড়াতে পেরেছি বটে, কিন্তু এই তিরিশ বছর বয়সেই ক্রাচ আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। ওই বছরেই তৈরি করি ‘ফ্রিডম ইন দ্য এয়ার’। শারীরিকভাবে অক্ষমদের জন্য ফ্লাইং স্কুল। ব্রিটেনের প্রথম এই ধরনের স্কুল। হার্টফর্ডশায়ারের এলসট্রিতে শারীরিকভাবে অক্ষমদের বিশেষ ফ্লাইং ট্রেনিং দেয় এই স্কুল।
তিনি জানান, এর পাশাপাশি ইউনিসেফের সঙ্গে পার্টনারশিপে গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকশন ইনিসিয়েটিভের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরও হই। যে সব জায়গায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক কারণে ভ্যাক্সিনেশনকে অবহেলা করা হয়, সেই সব দেশে পোলিও ভ্যাক্সিনেশনের সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। আল জাজিরা টিভির ‘পাসপোর্ট ফ্রম পোলিও’ তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে আস্তাকুঁড়ের এই গৌতমের কলকাতায় ফেরা, বস্তিতে মোবাইল ভ্যাক্সিনেশনের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ। বস্তুত, কলকাতার এই অভিজ্ঞতা ফটোগ্রাফিক এগজিবিশন ফুল সার্কেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
নিজের জীবনে মাদার তেরেসার অবদান কোথায় এই উত্তর দিতেই মাদারকে নিয়ে এক ঘণ্টার তথ্যচিত্র ‘মাদার টেরিজা অ্যান্ড মি’ তৈরি করেছেন গৌতম লুইস। তৈরি করেছেন ফিউশন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘মরা গাং’। ৪ সেপ্টেম্বর মাদার তেরেসার সন্তায়নের দিন দুইশোরও বেশি দেশে মুক্তি পাচ্ছে সেই গান।
গৌতম বলেন, মাদার আমার ঈশ্বর। মাদারই আমায় আকাশ দেখিয়েছিলেন। আজ সেই আকাশের কোলে যে আশ্রয় পাই, তা তো আসলে মাদারেরই আশ্রয়! সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ