গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালে রয়েছেন ভারতের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কেউ কোন আলোচনা করতে পারবে না এমনই এক অলিখিত ফতোয়া জারি হয়েছে সেই প্রদেশে। এমনকি ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কিছু পোস্ট করা তো বহু আগেই নিষিদ্ধ হয়েছে। আর এসব অমান্য করায় গ্রেফতারের সংখ্যা এখন ২২ জন ছাড়িয়েছে।
এদিকে এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জয়ললিতা বিরোধীরা। কিন্তু কেন এতো কঠোরতা, কেন এতো ‘ভয়’? আসলে পুলিশ-প্রশাসনের ভয় আম্মা (জয়ললিতা) ভক্তদের নিয়ে। জয়ললিতাকে নিয়ে কোন খারাপ খবর পেলে তার ভক্তরা যে কোন সময়ে আত্মহত্যা করতে পারেন!
গত বছর জয়ললিতা জেলে যেতেই আত্মঘাতী হয়েছিলেন অন্তত আড়াইশো জন সমর্থক। আর যদি এখন তার ‘তেমন কিছু’ হয়ে যায়, তবে অবস্থাটা যে কোথায় দাঁড়াবে, তা ভাবতেই শিউরে উঠছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তাই এই ‘অতিসক্রিয়তা’। এই অবস্থায় সেখানকার সংবাদমাধ্যমও মেপে পা ফেলছে। সরকারি বুলেটিন বা হাসপাতালের প্রেস রিলিজের বাইরে কিছু ছাপা হচ্ছে না। ফলে জল্পনা-কল্পনা আরও বাড়ছে।
তবে সব থেকে চাঞ্চল্য ফেলেছে কোয়েম্বাটোরের একটি ব্যাংকের ঘটনা। কানাড়া ব্যাংকের এক কর্মী এবং তার পরিচিত এক গ্রাহক জয়ললিতার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখনই ব্যাংকের ওই শাখায় পুনিতা দেবী নামে এক গ্রাহক পাসবই আপডেট করতে এসেছিলেন। এসময় পুনিতা দেবী তাদের আলোচনা শুনতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করেন। শুরু হয় ঝগড়া। পুনিতা দেবী থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। গ্রেফতার করা হয় ওই ব্যাংকের কর্মী এল রমেশ এবং গ্রাহক আর সুরেশকে। আদালতের নির্দেশে তাদের বিচার বিভাগীয় হাজতে রাখা হয়েছে। এই ঘটনার পর তাদের পাশে দাঁড়াতেও ‘ভয়’ পাচ্ছে কর্মচারী সংগঠনগুলি।
একই অবস্থা রাজনৈতিক দলগুলিরও। সরাসরি 'আম্মা'র স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে সাহস পাচ্ছেন না কোন দলের কোন নেতাই। তবে ডিএমকে-সহ অন্য দলগুলি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের খবর জানতে চাইছেন রাজ্য সরকারের কাছে। তবে এই গ্রেফতারির বিষয় নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সমালোচনা। গ্রেফতারির বিরুদ্ধে ডিএমকে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে এডিএমকে সরকারের বিরুদ্ধে। ডিএমকের পক্ষ থেকে এম কে স্ট্যালিন বলছেন, বেছে বেছে তাদের দলের এবং অন্য বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা করছে পুলিশ। এই অবস্থা চলতে পারে না। তবে এঅইএডিএমকের মুখপাত্র সি আর সরস্বতী বলছেন, পুলিশ সঠিক কাজ করছে। কাউকে অন্যায়ভাবে ধরা হয়নি।
'আম্মা'র ভক্তদের অবশ্য এই সব তাত্ত্বিক কথায় মন নেই। তাঁরা এখন দলে দলে ভিড় জমাচ্ছেন চেন্নাইয়ের সেই বেসরকারি হাসপাতালের সামনে। যারা যেতে পারছেন না, তারা স্থানীয় মন্দিরে গিয়ে প্রার্থণা করছেন। চেন্নাই, মাদুরাই, তিরুচিরাপল্লি থেকে কন্যাকুমারী, সর্বত্রই একই চিত্র। কিন্তু তবুও 'আম্মা'র শরীর নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ্যে বলা চলবে না।
বিডি প্রতিদিন/১৯ অক্টোবর ২০১৬/হিমেল