ভারতের একসময়ের গর্বের গাড়ি অ্যাম্বাস্যাডার ৮০ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছে ফরাসি কোম্পানি পিউজো। আর সেই সঙ্গে হাত বদল হল ইতিহাসেরও। যে গাড়িটিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি এক সময় চড়তেন, তার দাম নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। আভিজাত্য, কৌলিন্য ঠিকরে বের হয় সেই গাড়ি থেকে। তবে সেটা এখন ইতিহাস।
স্বাধীন ভারতের প্রতিচ্ছবি এই অ্যাম্বাস্যাডার। ইতিহাস বলছে, স্বাধীন ভারতের প্রায় সমসাময়িক বয়স এই গাড়ির। ১৯৫৭ সালে হুগলির উত্তরপাড়ায় সি কে বিড়লার মালিকানাধীন হিন্দুস্থান মোটরস কোম্পানি অ্যাম্বাস্যাডারের উৎপাদন শুরু করে। কেন্দ্রের 'শিশু শিল্প সংরক্ষণ' এর যুক্তিতে এক সময় দেশে একচেটিয়া বাজার পায় অ্যাম্বাস্যাডার। শুধুমাত্র গাড়ি তৈরি হয় বলেই একটা বিশাল স্টেশনের নাম হয়ে যায় 'হিন্দু মোটর'।
জাপানের টয়োটার পরে এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো গাড়ি এই অ্যাম্বাস্যাডার। আশির দশকে জাপানি সংস্থা সুজুকির মারুতি ভারতে এলে প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে ক্রমশ অ্যাম্বাস্যাডার পিছু হঠে। বিক্রি কমতে থাকে। তবু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মালবাহী গাড়ির প্রযুক্তি নিয়ে বেঁচে ছিল এই ব্র্যান্ড। কোম্পানিটিকে বাঁচাতে কম চেষ্টা হয়নি। এক সময় কলকাতায় একমাত্র ট্যাক্সি বলতে লোকে অ্যাম্বাস্যাডারকেই বুঝত। পরের দিকে নিয়ম করার চেষ্টা হয়, ট্যাক্সি মানে অ্যাম্বাস্যাডরই হতে হবে। যদিও আরও পরে ফিয়াট এবং এখন সুজুকি ডিজায়ার–সহ আরও কয়েকটি নতুন গাড়ি ট্যাক্সি হিসাবে ব্যবহ্ত হয়। তবে কলকাতায় এখনও বেশির ভাগ ট্যাক্সিই অ্যাম্বাস্যাডর।
কিন্তু কালের নিয়মেই অ্যাম্বাস্যাডার পিছিয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে যেখানে প্রতি বছর ২৪ হাজার গাড়ি নির্মিত হত ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় আড়াই হাজারে। ২০১৪ সালে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জে বিবৃতি দিয়ে সি কে বিড়লা গ্রুপ জানিয়েছে, 'পোজিও এসএ গ্রুপের সঙ্গে অ্যাম্বাস্যাডার ব্রান্ডের বিক্রি যার মধ্যে রয়েছে ট্রেডমার্কও সেই নিয়ে ৮০ কোটি টাকার একটি চুক্তি করেছে হিন্দুস্থান মোটরস। '
বিডি প্রতিদিন/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/এনায়েত করিম