গণকবরের ধুলো সরিয়ে উঠে এল আয়ারল্যান্ডের এক ভয়ঙ্কর অধ্যায়। এ যেন ইতিহাসের ধুলো ঝেড়ে বেরিয়ে পড়া এক কঙ্কাল। কারণ অবিবাহিত মায়েদের সন্তানদের অগণিত কঙ্কাল মিলল দেশটির ছোট্ট শহর টুয়ামের এক গণকবরে। ২০১৪ সালেই সে খবর জানিয়েছিলেন স্থানীয় গবেষক ক্যাথরিন করলেস। তবে সে কথায় বিশেষ নজর দিতে চায়নি আয়ার্ল্যান্ড সরকার।
তবে অবশেষে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার চাপে পড়ে সম্প্রতি ব্যাপারটিকে নিয়ে পুনরায় ভাবতে বাধ্য হয়েছে আয়ারল্যান্ড। একটি কমিশন গঠন করে ওই গণকবরের খননকাজও শুরু করা হয়। গত শুক্রবার কমিশন সেই কলঙ্কিত অধ্যায়ের রিপোর্ট পেশ করেছে।
জানা গেছে, পশ্চিম আয়ার্ল্যান্ডের গ্যালওয়ে কাউন্টির টুয়ামের প্রসূতি ভবনের নীচে ধামাচাপা পড়েছিল সেই গণকবর। ওই ভবনের বিল্ডিংয়ের নীচে সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে রয়েছে ১৭টি কুঠুরি। তাতেই মিলেছে অসংখ্য শিশুর কঙ্কাল।
নিজের গবেষণাপত্রেও এমনটাই দাবি করেছিলেন ক্যাথরিন। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, "অবিবাহিত অন্তঃসত্ত্বারাই থাকতে আসতেন সেখানে। প্রসবের পর কিছু দিন থেকে সেখান থেকে চলে গিয়ে নতুন জীবনে পা রাখতেন। তবে প্রায় কেউই সদ্যোজাত সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে যেতেন না। কী হয়েছিল সেই সন্তানদের তা কেউ জানেন না।"
গবেষণাপত্রে তিনি আরও জানান, "প্রসূতি ভবনের নীচেই এই সব শিশুদের গণকবর দেওয়া হত। স্থানীয় ছেলেপুলেরা ওই ভবনের আশপাশে খেলতে গিয়ে অসংখ্য কঙ্কাল আর হাড়গোড় দেখতে পেয়েছিল। ফাটা কংক্রিটের থেকে বেরিয়ে আসা সেই ভয়ানক দৃশ্য দেখে শিউরে উঠত তারা।"
ক্যাথরিনের গবেষণার কথা নিজের ব্লগে উল্লেখ করেন ওয়াশিংটন পোস্টের ব্লগার টেরেন্স ম্যাকয়। দীর্ঘ দিনের গবেষণার পর ক্যাথরিনের বিশ্বাস, ওই গণকবরে অন্তত ৭০০ থেকে ৮০০ শিশুর কঙ্কাল রয়েছে। গোটা ঘটনা ধামাচাপা দিতে কোনও রকম সৌধফলক ছাড়াই তাদের ফেলে দেওয়া হয় ওই সেপটিক ট্যাঙ্কে। এর পর তাতে আবর্জনা আর মাটিচাপা দিয়ে দেওয়া হয়।
প্রথমদিকে গণকবরের ঘটনাটা সকলেই ভুয়ো খবর বলে উড়িয়ে দিলেও আন্তর্জাতিক স্তরে এখন তা নিয়ে সাড়া পড়েছে। গণকবরে ১৯২৫ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত সময়কালের কঙ্কাল মিলেছে। কমিশন জানিয়েছে, ওই গণকবরে খননকাজের পর কার্বন ডেটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কঙ্কালগুলির পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। তাতে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই কঙ্কালগুলির বয়স ৩৫ সপ্তাহ ৩ বছরের মধ্যে।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, টুটাম শহরের ওই প্রসূতি ভবন বন্ধ হয়ে যায় ১৯৬১ সালে। রেডিওকার্বন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইঙ্গিত মিলেছে, প্রসূতি ভবনের কার্যকালের মধ্যেই ওই শিশুদের গণকবর দেওয়া হয়। গোটা ঘটনায় কমিশন সদস্যদের বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না। ঘটনার পিছনে কার হাত রয়েছে তাও খুঁজে বের করতে চায় তারা। এ নিয়ে আরও তদন্ত করার কথা জানিয়েছে কমিশন।
এদিকে গোটা ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে প্রেছে আয়ারল্যান্ড সরকার। আয়ারল্যান্ডের শিশু ও যুব বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন জাপোন এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা।” স্বীকার করেন, গত কয়েক বছর ধরেই এ নিয়ে দাবি উঠছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। এবং তা ওই প্রসূতি ভবনের সময়কালের ঘটনা। যে স্বল্প সময়ের জন্য শিশুরা ওই ভবনে বাস করেছিল তাদের সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করাটাই আসল। শিশুদের কঙ্কালগুলি যাতে যথাযত ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।”
এদিকে কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর এ বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ওই বন সেকুর সিস্টার্স কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছেন, তদন্তের কাজে সাহায্যের জন্য ওই সময়কালের সমস্ত নথিপত্র কমিশনের কাছে তুলে দেওয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ৫ মার্চ, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-১৩