সময়ের সমাপতনই বলতে হবে। আগে থেকে অনুমতি নেননি, তাই মাত্র তিন সপ্তাহ আগে সিমলার কাছে মাশোভরায় রাষ্ট্রপতির অবসরকালীন নিবাসে ঢুকতে না পেরে পরিবার নিয়ে ফিরতে হয় বিজেপি'র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকে। কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনিই হতে চলেছেন রাইসিনা হিলের পরবর্তী বাসিন্দা।
কী হয়েছিল সেদিন? মে মাসের শেষের দিকে সিমলায় সপরিবার ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন রামনাথ। স্ত্রীকে নিয়ে সরকারি গাড়িতে বসেছিলেন কোবিন্দ। পরিবারের অন্য সদস্যরা বসেছিলেন ভাড়ার গাড়িতে। তখন সিমলায় রাষ্ট্রপতির অবসরকালীন নিবাস ঘুরে দেখতে চাওয়ার আবেদন করেন তিনি। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ওই দিন তাঁদের অনুমতি দেয়নি সরকার। বছরে অন্তত একবার সিমলার অবসরকালীন নিবাসে একান্তে সময় কাটান ভারতের রাষ্ট্রপতি।
এ ছিল মাত্র তিন মাসের পুরনো ঘটনা। এরই মধ্যে সোমবার বিজেপি তাঁদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে বিহারের রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দের নাম ঘোষণা করে। মঙ্গলবার তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা করে রাজ্যপাল পদে ইস্তফা দেন। রাইসিনা হিলের পক্ষেও ইস্তফা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
এরপরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে বিহারের রাজ্যপাল হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালেই কোবিন্দ দিল্লি যান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তাঁকে নিজের বাড়িতে স্বাগত জানান বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঘোষণার পরেই বিহার নিবাসে সাক্ষাৎপ্রার্থীরা যেতে শুরু করেছেন।
মঙ্গলবারও সমানে সাক্ষাৎপ্রার্থীরা এসে ফেরত যাচ্ছেন। সংখ্যার বিচারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৪৮ শতাংশ ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে এনডিএ–র। বড় দু’টি দলের সমর্থন পেলেই কোবিন্দের রাইসিনা হিলের বাসিন্দা হওয়া পাকা। তবু সরকার চাইছে যত বেশি সম্ভব সমর্থন জোগাড় করা সম্ভব, তা করতে। তাতে মানও বাঁচে, আর পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানো যায়।
এদিকে, বিজেপি–র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থন করা নিয়ে কার্যত দু’ভাগ হয়ে গেল বিহারের ক্ষমতাসীন জোট। সংযুক্ত জনতা দলের পক্ষে নীতীশ কুমার যেখানে কোবিন্দকে সমর্থন করেছেন, সেখানে ঘোরতর আপত্তির কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দল প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব।
লালুর বক্তব্য, রাষ্ট্রপতি ভবনে আরএসএস–এর কাউকে তিনি সমর্থন জানাতে পারবেন না। বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন বিরোধীরা আরও ভাল দলিত প্রার্থী দাঁড় করাতে না পারলে কোবিন্দকেই সমর্থন করবে তাঁর দল।
এই অবস্থায় কোবিন্দের পক্ষে সমর্থন আদায় করতে উদ্যোগী হলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন তিনি। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টিকে। উভয় দলই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কোবিন্দকে সমর্থন করা নিয়েই কথা হবে।
বিডিপ্রতিদিন/ ২২ জুন, ২০১৭/ ই জাহান