মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর চলছে দমন-পীড়ন, নির্যাতন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা। প্রাণে বাঁচতে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।
আর এ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে নিধনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে ইসরায়েল। তাদের সরবরাহকৃত অস্ত্রেই আরাকানে চলছে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান। জানা গেছে, প্রচুর পরিমাণে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে মিয়ানমার সেনাকে সাহায্য করছে ইসরায়েল সরকার।
‘মিডল ইস্ট আই’ নামের এক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মিয়ানমার সেনাকে রোহিঙ্গা নিধন করতে অত্যাধুনিক অস্ত্র জোগান দিচ্ছে ইসরায়েল। ওই অস্ত্রের জোরেই রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী ও সাধারণ মানুষদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে সরকারি বাহিনী। এছাড়াও ‘টার আইডিয়েল কনসেপ্টস’-সহ একাধিক ইসরায়েলি অস্ত্রনির্মাণকারী সংস্থা বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মিয়ানমারের কমান্ডোদের।
ইতোমধ্যে প্রায় ১০০টি ট্যাঙ্ক, গানবোট, মিসাইল-সহ অন্যান্য মরণাস্ত্র মিয়ানমার সেনাকে দিয়েছে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, এই ইস্যুতে নাইপিদোকে সবধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে তেল আবিব। প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে মিয়ানমারকে অস্ত্র সহযোগিতা করছে ইসরায়েল।
প্রসঙ্গত, রাখাইন প্রদেশে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তবে ইসরায়েল সে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মিয়ানমারের পাশে থাকায় মিয়ানমার সরকারি বাহিনী অস্ত্র সংকটে পড়ছে না, এমনটাই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, মায়ানমার সেনার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জঙ্গিদমনের নামে নির্বিচারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে সরকারি বাহিনী, এমনটাই দাবি জাতিসংঘসহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের। এই ইস্যুতে সুচি সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ।
পরিসংখ্যান বলছে, সম্প্রতি ৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাঁদের ফিরিয়ে নিতে কিছুতেই রাজি নয় মিয়ানমার। পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ইয়াংহি লি জানিয়েছেন, এপর্যন্ত রাখাইন প্রদেশে চলা সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১ হাজার নিরীহ মানুষ। তাঁদের মধ্যে সিংহভাগই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে মৌন থাকায় সমালোচিত হয়েছেন নোবেলজয়ী মায়ানমারের নেত্রী আং সান সুচি। তাঁর নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার দাবিও উঠেছে।
বিডি প্রতিদিন/ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/ ইমরান জাহান