কাতারের বিমান বাহিনীর হাতে থাকা রাফাল যুদ্ধবিমানের সাহায্যে নিজেদের পাইলটদের এই বিমান চালানো শিখিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। ২০১৭ সালের নভেম্বরেই ফ্রান্সের মাটিতে চলেছিল এই প্রশিক্ষণের কাজ।
সদ্য একটি রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ল ভারতের। কারণ, অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানের সাহায্যেই আকাশযুদ্ধে নিজেদের এগিয়ে রাখার পরিকল্পনা ছিল ভারতের।
সম্প্রতি এআইএন অনলাইন ডট কম নামের একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এই রিপোর্ট।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে কাতারের হয়ে যে পাইলটরা রাফাল বিমান ওড়ানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই বিমান বাহিনীর অফিসার।’
ভারতের মতোই ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফাল কিনতে চুক্তিবদ্ধ কাতার। রাফাল যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারক দাসোঁ অ্যাভিয়েশনের তরফে প্রকাশ করা প্রেস বিবৃতি থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে ২৪টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে কাতার।
২০১৭ সালে কাতার আরও ১২টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনতে নতুন চুক্তি করে ফ্রান্সের সঙ্গে। প্রথম দফার ২৪টি যুদ্ধবিমানের জন্য চুক্তির অর্থমূল্য ছিল প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। সেই যুদ্ধবিমান চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ নিতেই কাতার থেকে ফ্রান্সে গিয়েছিল পাইলটদের একটি দল। সেই দলেই ছিলেন পাকিস্তানি পাইলটরা, এমনটাই দাবি এআইএন অনলাইন ডট কমের।
দাসোঁ অ্যাভিয়েশনের যে কর্মকর্তা এখন ভারতে আছেন, তাদের এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, কাতার এয়ার ফোর্সের হয়ে পাকিস্তানি পাইলটরা রাফাল ওড়াতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, এই রকম কোনও খবর তাদের কাছে নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বরাবরই সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে পাকিস্তানের। এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে মোতায়েনও থাকেন পাকিস্তানি সেনা। জর্ডানের মতো দেশের কাছ থেকে সরাসরি সামরিক সহযোগিতা পেয়ে থাকে পাকিস্তান। কিছু দিন আগেই ইসলামাবাদকে ১৩টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়েছিল জর্ডন।
বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর অভিযানের পর নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে যে যুদ্ধবিমানগুলি ভারতের আকাশে হামলা চালাতে এসেছিল, তার মধ্যে জর্ডানের দেওয়া যুদ্ধবিমানও থাকতে পারে, এমনটাই অনুমান বিশেষজ্ঞদের।
বিভিন্ন পাক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ইসলামাবাদে পাকিস্তান বিমানা বাহিনীর সদর দফতরে গিয়েছিলেন কাতারের বিমান বাহিনী প্রধান।
সেই অনুষ্ঠানের পর পাক বিমান বাহিনী প্রধান জানিয়েছিলেন, ‘সামরিক ক্ষেত্রে পাক বিমান বাহিনীকে সব রকমের সাহায্য করতে প্রস্তুত কাতার।
এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই ভারতে আসতে চলেছে রাফাল যুদ্ধবিমান। তার আগেই পাকিস্তানি পাইলটরা এই বিমান ওড়ানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেললে তা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ ভারতের কাছে। কারণ, ভারত তার নিজের পছন্দ মাফিক রাফাল যুদ্ধবিমানে বেশ কিছু অদলবদল করার পরই তা কিনতে সম্মত হয়েছে। তাই কাতারের কেনা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে ভারত যে রাফাল কিনছে, তার ফারাক থাকলেও এই বিমানের রাডার ব্যবস্থা দুই দেশের ক্ষেত্রেই এক।
অত্যাধুনিক এই রাডার ব্যবস্থা থাকলে বিমান ওড়ানোর সময়েই পাইলটরা টের পেয়ে যান, আকাশ বা সমুদ্রের কোথায় বিপদ লুকিয়ে আছে বা কোন জায়গা থেকে আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিপক্ষ।
এখন এই রাডার ব্যবস্থা পাকিস্তানের হাতে থাকলে ভারতের রাফাল আকাশে উড়লেই পাক সেনা তার হালহকিকত জেনে ফেলতে পারবে খুব সহজেই।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পাইলট অংশুমান মইনকার এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে ওরা জেনে যাবে এই যুদ্ধবিমানের অস্ত্রব্যবস্থা কেমন। কতক্ষণ আকাশে উড়তে পারে। কীভাবে এই বিমান অভিযান চালায়, এই সব কিছুই।’
অর্থাৎ, রাফাল হাতে থাকলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আক্রমণের কৌশল কী হতে পারে, তা নিয়ে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর কাছে আর কিছুই অজানা থাকবে না। খবর আনন্দবাজার
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন