কাশেম সোলেইমানিকে হত্যার পর ইরান বলেছিল যে হামলাকারীদের চড়া মূল্য দিতে হবে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানের মিসাইল হামলায় আমেরিকার কোন প্রাণহানি হয়নি।
তাহলে ইরান কি ইচ্ছে করেই ক্ষতি করতে চায়নি?
ইরানের ইসলামিক রেভোলুশনারি গার্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, সন্ত্রাসীদের দখল এবং মার্কিন আগ্রাসী বাহিনীর বিমানঘাঁটি ধ্বংস করতে আল-আসাদে ১০টি মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে।
আল আসাদের এই ঘাঁটি থেকে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে আমেরিকার সামরিক তৎপরতা চলে।
ইসলামিক রেভোলুশনারি গার্ডের ঘনিষ্ঠ তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, মার্কিনীদের বিরুদ্ধে হামলার জন্য ফতেহ-৩১৩ এবং কিয়াম মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে।
মার্কিন বাহিনী এসব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের একগুচ্ছ মুখ রয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, দুটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরান এক ডজনেরও বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের মিসাইল হামলায় আমেরিকার কোন প্রাণহানি হয়নি। যে দুটি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে সেখানে সামান্য ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে মি: ট্রাম্প বলেন, আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। এছাড়া আগাম সতর্ক সংকেত বেশ ভালোভাবে কাজ করেছে তিনি বলেন।
ট্রাম্প বলেন, "মনে হচ্ছে ইরান ক্ষান্ত দিয়েছে।" যদিও আমেরিকার একজন শীর্ষ সামরিক জেনারেল মার্ক মিলে বলেছেন, এ হামলা মারাত্মক হতে পারতো।
তার ব্যক্তিগত পর্যালোচনা হচ্ছে, ইরান কাঠামোগত ক্ষতি করতে চেয়েছিল। এছাড়া যানবাহনের ক্ষতি সাধন, যন্ত্রপাতি, বিমানের ক্ষতি সাধন এবং সৈন্যদের হত্যা করতে চেয়েছিল।
মিসাইল কোথায় আঘাত করেছে?
ইরাকের সামরিক বাহিনীও বলেছে যে মিসাইল হামলায় কোন প্রাণহানি হয়নি। বুধবার রাত ১:৪৫ মিনিট থেকে ২:১৫ মিনিটের ইরাকে ২২টি মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে আল-আসাদ বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে।
মিডলবারি ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জন্য কিছু স্যাটেলাইট ছবি নিয়েছে প্ল্যানেট ল্যাব নামে একটি বাণিজ্যিক সংস্থা। এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে আল-আসাদ ঘাঁটিতে পাঁচটি জায়গায় ক্ষতি হয়েছে।
মিডলবারি ইন্সটিটিউটের একজন বিশ্লেষক বলছেন, যেসব জায়গায় মিসাইল আঘাত করেছে তার কয়েকটি দেখে মনে হচ্ছে এগুলো আল-আসাদ ঘাঁটির কেন্দ্রে।
এটা পরিষ্কার যে কিছু মিসাইল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারেনি। ইরাকের সামরিক বাহিনী বলছে, আল-আসাদ ঘাঁটি লক্ষ্য করে যেসব মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে দুটি মিসাইল ঘাঁটির বাইরে পড়েছে এবং সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি।
এসব মিসাইলের কিছু ছবি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে।
ইরাকের সামরিক বাহিনী বলছে, উত্তরাঞ্চলের কুর্দিস্তান এলাকায় অবস্থিত ইরবিল ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাঁচটি মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে ইরবিল ঘাটিতে কয়টি মিসাইল আঘাত করেছে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলছে, দুটি মিসাইল সিদান নামক একটি গ্রামে পড়েছে।
এই গ্রামটি ইরবিল শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। তৃতীয় মিসাইলটি ইরবিল শহরের ৪৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম পড়েছে।
ইরান কি ক্ষতি এড়াতে চেয়েছে?
মার্কিন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, তারা বিশ্বাস করে ইরান ইচ্ছে করেই ক্ষতির মাত্রা সীমিত রাখতে চেয়েছে।
ইরান একদিকে তাদের সংকল্প দেখাতে চেয়েছে এবং অন্যদিকে আমেরিকার ক্ষতি করা এড়িয়ে গেছে যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়।
পেন্টাগন-এর এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সিএনএন সাংবাদিক জ্যাক টেপার বলেন, " ইরান ইচ্ছে করেই টার্গেট নির্ধারণ করেছে যাতে প্রাণহানি না হয়।"
অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, মার্কিন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার নাগাদ জানতো যে ইরান হামলা করতে পারে। তবে কোথায় হামলা করবে সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত ছিলনা। মার্কিন গোয়েন্দারা আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে আমেরিকার সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কের পেন্টাগন সংবাদদাতা ডেভিড মার্টিন বলেছেন, হামলা বেশ আগেই তারা সতর্কবার্তা পেয়েছেন এবং সে অনুযায়ী সৈন্যরা বাঙ্কারে চলে যাওয়ার যথেষ্ট সময় পেয়েছিল।
মার্কিন সূত্রগুলো বলছে, স্যাটেলাইট সিগন্যাল এবং ইরানের কমিউনিকেশন সিস্টেমে আড়ি পাতার মাধ্যমে এই সতর্কবার্তা পাওয়া যায়।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে নজরদারীর ক্ষেত্রেও আমেরিকা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে।
তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এ কর্মকর্তা মনে করেন, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্যই ইরান হামলা করেছে।
ইরান ইচ্ছে করে ক্ষতি করতে চায়নি - এ ধারণার সাথে একমত নন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এ কর্মকর্তা।
"আমাদের কর্মকাণ্ডের কারণেই আমেরিকানদের জীবন রক্ষা পেয়েছে," বলেন সে কর্মকর্তা।
প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিবিসির সংবাদদাতা জনাথন মার্কাস বলেন- ইরান ইচ্ছে করেই ক্ষতি করতে চায়নি নাকি তাদের মিসাইলের সীমাবদ্ধতার কারণে সেটি হয়নি - এটি এখনো পরিষ্কার নয়।
তবে আমেরিকার বিরুদ্ধে দূরপাল্লার মিসাইল নিক্ষেপ করা সঠিক জায়গায় আঘাত করা একটি বিপদজনক বিষয়।
মার্কাস বলেন, আল-আসাদ ঘাঁটিতে ইরানের যে মিসাইল আঘাত করেছে সেগুলোর বেসামরিক স্যাটেলাইটের ছবি দেখে মনে হচ্ছে, কয়েকটি স্থাপনা ধ্বংস করেছে।
সুতরাং ক্ষতি কম হবার বিষয়টি সৌভাগ্যক্রমে ঘটেছে বলে মনে করেন মার্কাস। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত