১৫ জুলাই, ২০২০ ১০:১৭

আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের নেতৃত্বে যে নারী

অনলাইন ডেস্ক

আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের নেতৃত্বে যে নারী

সারাহ বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল মহাকাশ থেকে আমি পৃথিবীকে দেখবো। কিন্তু আপনাকে সব সময় শুনতে হতো এটা অসম্ভব। সংযুক্ত আরব আমিরাত চলতি সপ্তাহে মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালাতে তাদের প্রথম স্যাটেলাইট পাঠাবে। যে অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হোপ মিশন।’

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমিরাতের মতো ক্ষুদ্র উপসাগরীয় দেশের জন্য এ হবে অভাবনীয় সাফল্য। আর এর পেছনের রূপকার এক নারী। যার নাম সারাহ বিনতে ইউসিফ আল আমিরি। ‘হোপ মিশনের’ বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান সারাহ। একইসঙ্গে দেশটির অ্যাডভান্সড সায়েন্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। নবীন এই বিজ্ঞানী ইতিমধ্যে আরব বিশ্বের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। ‌

১৯৮৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সারাহর জন্ম। বয়স মাত্র ৩২। কিন্তু মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন একেবারে ছোটবেলা থেকে। তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন ছিল মহাকাশ থেকে আমি পৃথিবীকে দেখবো। কিন্তু আপনাকে সব সময় শুনতে হতো এটা অসম্ভব। বিশেষ করে আপনি যদি এমন একটা দেশে থাকেন, যে দেশটা একেবারেই নতুন‍।”

সারাহ আল-আমিরি পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্সে, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব শারজাহতে। তার বরাবরই আগ্রহ ছিল এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। কিন্তু তখন আমিরাতের কোন মহাকাশ কর্মসূচিই ছিল না।

পড়াশোনা শেষে তিনি যোগ দেন এমিরেটস ইনস্টিটিউশন ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে। সেখানে তিনি কাজ করেছেন দুবাইস্যাট-১ এবং দুবাইস্যাট-২ প্রকল্পে। ইউএই‌’র পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন এরপর। ২০১৬ সালে তাকে এমিরেটস সায়েন্স কাউন্সিলের প্রধান করা হয়। সব মিলিয়ে শুরু থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের সঙ্গে জড়িত তিনি।

সারাহ আল-আমিরি এখন তার স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় ক্ষণ গুনছেন। তিনি বলেন, “আমি খুবই নার্ভাস বোধ করছি। এই অভিযানের জন্য আমরা সাড়ে ছয় বছর ধরে কাজ করেছি। মহাকাশের যে বিশালত্ব, এটিকে জানা এবং বোঝা যেরকম জটিল, সেটা আমাকে মোহিত করেছিল। এই মহাকাশযান নিয়ে আমরা পরীক্ষার পর পরীক্ষা চালিয়েছি, যাতে সব ধরনের পরিস্থিতিতে এটা টিকে থাকে। আমাদের এসব কাজের ফসল এখন একটি লঞ্চপ্যাডে একটি রকেটের ওপর বসে আছে। এটি যাবে এমন এক গ্রহে, যে গ্রহটি আমাদের কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে।”

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশ অভিযানের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। এক্ষেত্রে তারা একেবারেই নতুন। এমন এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছে, যা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত বা চীনের মতো বড় বড় দেশ নিতে পেরেছে।

আরও অনেক উপসাগরীয় দেশের মতোই সংযুক্ত আরব আমিরাতও এখন তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য একটি ভবিষ্যতমুখী জ্ঞান-নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা। এই মহাকাশ প্রকল্প সেই লক্ষেই নেওয়া।

তবে দেশটির যেহেতু মহাকাশ অভিযানের কোন পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই, তাই তাদের প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা। এভাবে মাত্র ছয় বছরের মধ্যে তারা অত্যাধুনিক একটি স্যাটেলাইট তৈরি করতে পেরেছে।

এই প্রকল্প গ্রহণকালে আমিরাত সরকার প্রকল্পের টিমকে বলেছিল, তারা কোন একটা বিদেশি কোম্পানি থেকে মহাকাশযান কিনতে পারবে না। নিজেদেরকেই তৈরি করতে হবে। এ কারণে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রজেক্ট টিমকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে যেতে হয়েছিল।

স্যাটেলাইটটি তৈরির বেশিরভাগ কাজ করা হয়েছে ইউনিভার্সিটি অক কলোরাডোর ‘ল্যাবরেটরি ফর এটমোসফিয়ারিক অ্যান্ড স্পেস ফিজিক্সে‌।’ তবে দুবাইয়ের ‘মোহাম্মদ বিন-রশিদ স্পেস সেন্টারেও’ উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার ব্রেট ল্যান্ডিন মনে করেন, আমিরাতের বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা এই কাজের মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান অর্জন করেছে, তার ফলে এরকম আরেকটি অভিযান চালানোর জন্য তারা এখন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

হোপ মিশন মূলত মঙ্গলগ্রহের জলবায়ু ও আবহাওয়া নিয়ে কাজ করবে। এই অনুসন্ধানের অন্যতম লক্ষ্য, মঙ্গলগ্রহ কীভাবে রুক্ষ ধূলিধুসর গ্রহে পরিণত হলো- সেটি জানা। মিশনের প্রকল্প পরিচালক ওমরান শরিফ বলেন, “আমরা এমন কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাতে চাইনি, যেটি এর আগে হয়ে গেছে। আগের কাজের পুনরাবৃত্তি করে আমরা বলতে চাইনি, আমরাও এটা করেছি।”

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মঙ্গলগ্রহ একসময় পৃথিবীর মতোই সাগর আর নদীতে আবৃত ছিল। যদি মঙ্গলের পরিমন্ডল পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাহলে কীভাবে গ্রহটি শুস্ক ও রুক্ষ হলো তার সূত্র হয়তো পাওয়া যাবে।

আমিরাতের স্যাটেলাইটটির ওজন ১ দশমিক ৩ টন। জাপানের দুর্গম তানেগাশিমা মহাকাশ বন্দর থেকে রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি বুধবার উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় এখন উৎক্ষেপণের সময় শুক্রবার পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ৫০ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রোবটিক মহাকাশযানটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার গন্তব্যে পৌঁছাবে। যে সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত তার ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর